ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩০ মে ২০২৪
  • অন্যান্য

নাটক-সিনেমায় তামাক সেবনের দৃশ্য দেখানো বন্ধের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ৩০, ২০২৪ ৫:৫৩ অপরাহ্ণ । ১৭৩ জন

বর্তমানে বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যম নাটক, চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজে তারকা বা অভিনয়শিল্পীদের মাধ্যমে সিগারেট, তামাক সেবনের দৃশ্য দেখানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে এসব দৃশ্য দেখানো বন্ধ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনাপত্র দেওয়ার দাবি জানিয়েছে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-২০২৪ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে ড. অরূপ রতন একটি জরিপ তুলে ধরে বলেন, দেশে তামাক ব্যবহারকারীদের মাঝে একটি বড় অংশ তরুণ। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-২০১৭-এর তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫ বছর থেকে তদূর্ধ্বদের মাঝে তামাক ব্যবহারের হার ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যা মোট জনসংখ্যার ৩ কোটি ৭৮ লাখ।

২০১৪ সালে পরিচালিত গ্লোবাল স্কুল বেজড হেলথ সার্ভে (জিএসএইচএস) অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৯ দশমিক ২ শতাংশ। বর্তমানে অনুকরণ, ফ্যাশন, স্মার্টনেস, কৌতূহল, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে তরুণরা ধূমপান ও মাদকে আসক্ত হচ্ছে, যা তামাক ও মাদক ব্যবহারকারীদের আচরণ পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিনোদনের বিভিন্ন মাধ্যমে বিশেষ করে নাটক, চলচ্চিত্র, ওয়েব সিরিজে তারকাদের মাধ্যমে সিগারেট, মাদক সেবনের দৃশ্য দেখানো হয়। বর্তমানে প্রচলিত ক্যাবল নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ওয়েব সিরিজ ও নাটক তরুণদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। গ্লোবাল ডাটা রিসার্চ ফার্মের তথ্যনুযায়ী, বাংলাদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দর্শক সংখ্যা ৭০ লাখ। কিন্তু এসব প্ল্যাটফর্মের সিরিজ ও নাটকে সিগারেট ও এলকোহলের দৃশ্য অনেক বেশি দেখানো হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধূমপান ও মদ্যপানের দৃশ্য দেখানোর সময় আইনি সচিত্র সতর্ক বার্তা প্রচার করা হয় না। ধূমপান ও তামাকের ভয়াবহতা রোধে বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পাস ও কার্যকর করে। ২০১৩ সালে এই আইন সংশোধিত হলেও প্রায়ই নাটক, সিনেমা ও ওয়েব সিরিজে এই আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ২০২০ সালে পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৭৫ লাখ মাদকাসক্তের মাঝে ৮০ শতাংশ তরুণ। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন মাদকের মতো অ্যালকোহলের ব্যবহারকারী তরুণদের সংখ্যাও ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মাঝে ৮৬ শতাংশ অ্যালকোহল ব্যবহারকারী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ২০২০-এর বার্ষিক ড্রাগ রিপোর্ট অনুসারে দেশে ১৫ বছর বয়সীদের ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ অ্যালকোহল ব্যবহারকারী এবং ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মাঝে ১৭ দশমিক ২৬ শতাংশ অ্যালকোহল ব্যবহারকারী। প্রায়ই জনপ্রিয় তারকা ব্যক্তিদের অনুকরণ করতে গিয়ে সিগারেট ও অ্যালকোহলের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তরুণরা।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে অভিনেত্রী রুমানা রশীদ ঈশিতা বলেন, তামাক ব্যবহার ও ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যারা বর্তমানে ধূমপান করছেন, তারা অন্তত আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে ধূমপান ছেড়ে দিন।

ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজর অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, আজকাল নাটক সিনেমায় তামাক ব্যবহার ও ধূমপানকে প্রমোট করা হচ্ছে। বর্তমানে ধানমন্ডির বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে সিগারেট খাওয়ার জন্য আলাদা জোনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা চাই সরকারের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার(মানস) সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তালুকদার প্রমুখ।