ঢাকাবুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

নেপাল: ধূমপানবিরোধী লড়াইয়ে নতুন ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৫ ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ । ১৩১ জন

ধূমপান রোধে অনন্য নজির গড়ল নেপাল! প্রথম দেশ হিসেবে তারা সম্পূর্ণ সিগারেট প্যাকেটকে চিত্রসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তায় ঢেকে ফেলার কঠোর আইন বাস্তবায়ন করেছে। জনসাধারণকে সচেতন করা এবং ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে শক্তিশালী বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যেই এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

নেপালের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিয়েছে, সিগারেট উৎপাদকদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে প্রতিটি প্যাকেটের সামনের ও পেছনের অংশে ১০০% কভারেজসহ ক্ষতিকর প্রভাবের ভয়াবহ চিত্র থাকবে। এছাড়াও, নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যগুলোর প্যাকেজিংয়েও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, প্যাকেটের পটভূমির রং, সতর্কবার্তার লেখা এবং ছবিগুলো Pantone 448C (drab dark brown) রঙের হবে, যা ধূমপানবিরোধী প্রচারণায় অন্যতম কার্যকর রং হিসেবে স্বীকৃত। ব্র্যান্ডের নাম শুধুমাত্র প্যাকেটের নিচের দিকে থাকবে, সামনের বা পিছনের অংশে নয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সুপারিশকৃত ৫০% সতর্কবার্তার সীমাকে ছাড়িয়ে গিয়ে নেপাল ১০০% কভারেজ নিশ্চিত করেছে, যা এই নীতির ক্ষেত্রে বিশ্বে প্রথম। WHO এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংগঠনগুলো নেপালের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। Vital Strategies-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট গণ কুয়ান বলেছেন, “নেপাল এখন বিশ্বে তামাকের প্যাকেজিংয়ে সবচেয়ে কঠোর স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা নীতির দেশ। এটি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ সালে নেপাল ৭৫% সতর্কবার্তা চালু করার পর ৫৮% ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল এবং তাদের দৈনিক সিগারেট গ্রহণ ১১টি থেকে ৫টিতে নেমে আসে। ২০২১ সালের আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নেপালে ৯০% সতর্কবার্তা চালু হওয়ার পর অর্ধেকের বেশি ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়ার চেষ্টা করেছে।

WHO-র ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেপালে ১৫-৬৯ বছর বয়সী প্রায় ২৯% প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহার করেন। এর মধ্যে ৪৮% পুরুষ ও ১২% নারী তামাক গ্রহণ করেন। নেপালে গড়ে প্রতিদিন ধূমপানজনিত কারণে ৭৫ জনেরও বেশি মানুষ মারা যায়। ধূমপানের কারণে নেপালের অর্থনীতিতে বছরে ৩২.৮ বিলিয়ন নেপালি রুপি ক্ষতি হয়, যার মধ্যে চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসের প্রভাব রয়েছে। তামাক ব্যবহারের ফলে পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে পড়ে, কারণ একজন ধূমপায়ীকে বছরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০০ প্যাকেট সিগারেট কিনতে দেশের মাথাপিছু জিডিপির ২২.৩% ব্যয় করতে হয়।

তবে এই পরিবর্তনের বিরোধিতা করছে তামাক কোম্পানিগুলো। তাদের আশংকা, সকারের এই কঠোর অবস্থানের কারণে চোরাকারবারীদের দৈরাত্ম বেড়ে যাবে। এর পরও নেপাল সরকার তাদের নীতিতে অটল রয়েছে। স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা মন্ত্রী প্রদীপ পাওডেল বলেছেন, “এই নীতির মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য।”

এই নতুন আইন ২০২৫ সালের ১৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে। নেপাল সরকার আশা করছে, এই কঠোর পদক্ষেপের ফলে দেশব্যাপী ধূমপানের হার কমবে এবং জনস্বাস্থ্য উন্নত হবে।

Vital Strategies বিশ্বাস করে যে প্রতিটি মানুষকে ন্যায়সঙ্গত ও কার্যকর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে সুরক্ষিত করা উচিত। সংস্থাটি বিভিন্ন দেশের সরকার, সম্প্রদায় এবং সংগঠনের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুনর্গঠন করে, যাতে স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।