দেশের শিল্পাঞ্চল হিসেবে খুলনা শহর পূর্ব থেকেই পরিচিত। খুলনা শহরে ক্রমান্বয়ে শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রেক্ষিতে এ শহরে জনসংখ্যা বসবাসের হার তুলনামূলকভাবে কম। অন্যদিকে খুলনা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা। বন্যা, পানির লবণাক্ততা, সুপেয় পানির সংকট, কৃষিভ‚মির পরিমাণ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে শহরটি পর্যুদস্ত। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিন ধরে শহরের জনগণ কর্মসংস্থানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পরে সমগ্র দেশের সাথে স্বল্প সময়ে সরাসরি যাতায়াত ব্যবস্থা সচল হওয়ায় খুলনায় শিল্প বিপ্লবের একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা একই সাথে নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি করবে। চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা- এরকম একটি মিশ্র পরিস্থিতিতে ন্যায়সঙ্গত পরিবর্তন ও সামাজিক সমতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের চাহিদার প্রতিফলন থাকা অত্যন্ত জরুরি।
উক্ত বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করে আজ ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, সকাল ১০ টায় খুলনার সমাজসেবা কার্যালয়ে “ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট” এবং “সিয়াম” এর যৌথ উদ্যোগের “ন্যায্য নগরে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিতে এডভোকেসী এবং নেটওয়াকিং বিষয়ক দিনব্যাপী একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী”র আয়োজন করা হয়। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ ইমরানের সঞ্চালনায় সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন, সিয়ামের নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট মাসুম বিল্লাহ।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো.শফিকুল ইসলাম এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন ইসলাম। প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সাস্থ্য অধিকার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১ টি ওয়ার্ডের স্থানীয় প্রতিনিধিগন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। মূল প্রবন্ধ ও প্রশ্ন উত্তর পর্ব শেষে অংশগ্রহণকারীরা অভিনয়ের মাধ্যমে দিনব্যাপী শিক্ষনীয় বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন। প্রশিক্ষণ পর্ব শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সাটিফিকেট বিতরণ করা হয়।
উদ্ধোধনী বক্তব্যে মো.শফিকুল ইসলাম বলেন দেশকে ভালোবাসতে হবে। দেশ এবং দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ন্যায্য নগরায়নের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি কমিউনিটিকে যুক্ত করে সমস্যাগুলের সমাধান করতে হবে।
মূল প্রবন্ধে সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, এডভোকেসী সুচিন্তিত প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তগুলোকে প্রভাবিত করে। আর নেটওয়ার্কিং পারস্পারিক সর্ম্পক উন্নয়ন, আত্ববিশ্বাস, শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধির মাধ্যমে কাজ করার প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এডভোকেসী এবং নেটওয়াকিং বিষয়ক দক্ষতা আমাদের ন্যায্য নগর প্রতিষ্ঠায় অর্ন্তভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।
এডভোকেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, বর্তমানে খুলনা শহরের যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো এখনই সমাধান না করা হলে ভবিষ্যতে এটি বাড়তেই থাকবে। এডভোকেসী এবং নেটওয়াকিং সমস্যার সমাধানের পথ সহজ করতে সহায়তা করবে। খুলনা নগরীকে এমন একটি শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যেখানে বৈষম্য থাকবেনা এবং সবাই কাধে কাধ মিলিয়ে নগর উন্নয়নে কাজ করবে।