স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে রাজধানীতে নেমে আসে যানজটের অভিশাপ। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর অপরিকল্পিতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি স্কুলবাস সার্ভিস চালু করতে না পারার ব্যর্থতায় পথেই নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। তাই রাষ্ট্র সংস্কারের এসময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্কুলবাস সার্ভিসের আওতায় এনে দীর্ঘদিনের পুরানো ক্ষত কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ পরিবহন বিশেষজ্ঞের।
রাজধানীজুড়ে দেখা যায় শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের চোখেমুখে দীর্ঘ অপেক্ষার ছাপ। শরীরজুড়ে রাজ্যের ক্লান্তি। দিনের শুরুতেই যেন দিনশেষের অনুভূতি দেখা গেছে তাদের মধ্যে। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা আগে ঘর থেকে বেরিয়েও মিলছে না গন্তব্যের দেখা। বলা যায় রাজধানীর স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা।
একেবারেই যে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি তা কিন্তু নয়। লোকদেখানো স্কুলবাস সার্ভিসের সবশেষ দৃষ্টান্ত রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দেখা গেছে। কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ওই স্কুলটিতে চলতি বছরের ৩ জুলাই অনেকটা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে চালু করা হয় তিনটি মাত্র বাস। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল সার্ভিসটি চালুর সকল ক্রেডিট ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নিলেও শর্ত মোতাবেক সংস্থাটি দেয়নি কোনো অর্থ। বরং ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল পলাতক থাকায় এখন অনেকটাই অনিশ্চিত স্কুলবাস প্রজেক্টটি।
পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকার রাস্তায় প্রতিদিন তৈরি হয় দুই থেকে আড়াই কোটির মতো ট্রিপ। যার মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ ট্রিপ স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের গাড়ির। ২০০৯ সালে স্কুলবাস চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। সেই প্রজেক্টটিও মুখ থুবড়ে পড়ে কিছুদিনের মধ্যেই। পরে ২০১০ সালে বিআরটিসি দুটি রুটে স্কুলবাস সার্ভিস চালু করলেও তা বর্তমানে বন্ধ। আর তাই, শুধু স্কুলবাস সার্ভিস চালু করাতে সমস্যার সমাধান দেখছেন না বিশেষজ্ঞ।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ক্যাচমেন্ট এরিয়াভিত্তিক যদি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা যায়, যেমন ৪ থেকে সাড়ে ৪ স্কয়ার কিলোমিটারের মধ্যে যারা থাকবে, তারাই শুধু ওই স্কুলে পড়ার সুযোগ পায়। তাহলে এখানে উইন উইন পরিবেশ তৈরি হবে। সহজেই বাসে করে স্কুলে শিক্ষার্থীদের আনা যাবে। পাশাপাশি ঢাকার যে স্কুলগুলো আছে, প্রত্যেকটা স্কুলের মান পরিবর্তনের বিষয়টা সেটারও কিন্তু একটা সুযোগ তৈরি হবে।
তাই রাষ্ট্র সংস্কারের এসময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্কুলবাস সার্ভিসের আওতায় এনে দীর্ঘদিনের পুরানো ক্ষত কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ দিলেন তিনি।
যে উদ্যোগই নেয়া হোক তা যদি হয় লোকদেখানো, তবে সমস্যার সমাধাণ হবে না বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।