গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, শব্দ ,উত্তাপ , বায়ু , মাটি এবং সর্বপরি মানুষের তৈরি ঘর – বাড়ি, রাস্তা – ঘাট, সব মিলেই পরিবেশ। এই পরিবেশই আমাদের জন্মদাতৃ , আমাদের ধাত্রী। প্রাকৃতিক পরিবেশ কে কাজে লাগিয়ে মানুষ তার সকল প্রয়োজন মিটিয়েছে। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির ফলে কিছু স্বার্থ লোভী মানুষ প্রাকৃতিককে দূষিত করে তুলেছে। এজন্য পরিবেশ যখন নেতিবাচক কারণে প্রভাবিত হয় এবং ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তখনই তাকে পরিবেশ দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণের মূল কারণ হল মানুষ ও তার লোভ, স্বার্থ ও বুদ্ধিহীনতা। যার ফলে প্রতিনিয়ত সে ধ্বংস করে চলেছে পৃথিবীর ভারসাম্য ও শৃঙ্খলা।
পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়। যেমন-
জলদূষণ
বর্তমানে জলদূষণ একটি ভয়ংকর সমস্যা। কলকারখানার দূষিত বর্জ্য পদার্থ দ্বারা, কৃষিজাত দ্রব্য, গৃহস্থালির আবর্জনা দ্বারা জল দূষিত হচ্ছে। এর ফলে মানুষের পানীয় জল ও জলচার প্রাণীদের জীবন আজ সংকটাপন্ন।
মৃত্তিকা দূষণ
কৃষি ও শিল্প বিপ্লব মৃত্তিকা দূষণের প্রধান কারণ। কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, কীটনাশক শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ , শহর এলাকার আর্বজনা প্রভৃতি মাটিতে মিশে মৃত্তিকাকে দূষিত করছে। এর ফলে নানা সংক্রামক রোগ ক্রমশ বিস্তার লাভ করেছে।
শব্দ দূষণ
কলকারখানার শব্দ, বিমানের শব্দ, যানবাহনের শব্দ, জোরালো মাইকের আওয়াজ, বাজী পটকার শব্দ মারাত্মক আকার ধারণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। এর ফলে মানুষের শ্রবণশক্তি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
বায়ু দূষণ
অবিচারে বৃক্ষছেদন , বনভূমিতে আগুন জ্বালানো , কলকারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া , যানবাহনের পরিত্যক্ত গ্যাস, পারমাণবিক ক্ষেপনাস্তের দূষিত পদার্থ বায়ুতে মিশে ক্রমাগত বায়ুকে দূষিত করে চলেছে। মানুষ গরমের থেকে রক্ষা পেতে যথেচ্ছ ভাবে এ. সি , ফ্রিজ ব্যবহার করছে। কিন্তু এতে co2,CFC ইত্যাদির মতো বিষক্ত গ্যাস পরিবেশে মিশে বায়ুকে দূষিত করে তুলছে।
মনস্তাত্ত্বিক দূষণ
মনস্তাত্ত্বিক দূষণ একপ্রকার জাতীয় দূষণ। সামাজিক অপসংস্কৃতি , বেকারত্ব, কুরুচিকার সিনেমা, পত্রিকা, পুস্তক প্রভৃতি যুবক যুবতিদের নৈতিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে। এর ফলে সমাজের অপরাধ প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।
পরিবেশ দূষণের প্রতিকার
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকারের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন দূষণের কারণগুলিকে চিহ্নিত করে প্রতিকারে সচেষ্ট হওয়া। জলদূষণ মৃত্তিকাদূষণ রোধ করার জন্য সরকারী আইন কঠোর ভাবে বলবধ করতে হবে। তাই শ্লোগান তুলন- “প্লাস্টিককে না বলুন, পৃথিবীকে হ্যাঁ বলুন!”
সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক দূষণ যাতে না ছাড়ায় তার জন্য বিভিন্ন সামাজিক অপসংস্কৃতিক ও বেকারত্ব দূর করতে হবে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। সামাজিক বনসৃজনের উপর গুরুত্ব দিতে হবে- “বন্যপ্রাণী রক্ষা করুন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করুন!
সংবাদ পত্র, টিভি, রেডিও প্রভৃতি গনমাধ্যমগুলির মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে।
“গাছ বাঁচাও, জীবন বাঁচাও”– প্রভৃতি স্লো গানের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করার জন্য ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসাবে পালনকরা হয়।
জীবন বাঁচাতে গেলে পরিবেশকে বাঁচাতে হবে। কারন পরিবেশর উপাদান নিয়েই আমাদের জীবন গড়ে উডেছে। পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করতে হলে সর্বপ্রথম মানব পরিবেশকে পালটাতে হবে। তাই আমরাই পারবো পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে।