গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন হলেও নিত্যপণ্যের বাজারে আসেনি স্বস্তি। পরিবর্তনের আগে বা পরে, বাড়তি দামের উত্তাপে হাত পুড়ছে ক্রেতাদের। দাম কমানোর উদ্যোগ হিসেবে শুল্ক কমালেও, আগের মতোই সিন্ডিকেটের হাতে বন্দি বাজার। এদিকে, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়লেও বাড়েনি মজুরি। তাই ভোক্তার কষ্ট ছিল বছরজুড়েই।
২০২৪। বছর জুড়েই নিত্যপণ্যের বাজারে দামের উত্তাপে পুড়েছে সাধারণ মানুষ। মূল্যস্ফীতির চাপে শুরু হয় চলতি বছরের পথচলা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব, প্রথম প্রান্তিকের ৩ মাসই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল দশ শতাংশের কাছাকাছি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল আরও চড়া।
জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের পর বেড়ে যায় চাল, আলু, আটা, ডিমের মত নিত্যপণ্যের দাম। রমজানকে সামনে রেখে সেঞ্চুরি হাঁকায় পেঁয়াজ। নতুন মন্ত্রিসভা দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমবারের মতো চাল, চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমায়।
বছরের ২য় প্রান্তিক, এপ্রিল-মে-জুন, এই তিনমাসে আরও বাড়তে থাকে নিত্যপণ্যের দাম। ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে মিলগেট থেকে বস্তায় মূল্য ও অন্যান্য বিষয় উল্লেখ করে চাল সরবরাহের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। যদিও বছর শেষ হলেও এখনও কার্যকর হতে দেখা যায়নি বাজারে।
জুলাই-আগস্টে অস্থির হয়ে ওঠে পুরো বাজার ব্যবস্থাপনা। ১৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়ে যায় ১৪ শতাংশ। আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর নিত্যপণ্যের বাজারে তদারকি চালায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। যদিও সেসময় বন্যার প্রভাবকে সামনে এনে ডিম, মুরগির দাম বাড়ান ব্যবসায়ীরা।
সেপ্টেম্বরে বিলাসী ও বাংলাদেশে উৎপাদিত ছাড়া সব ধরনের পণ্য আমদানিতে এলসি বা ঋণপত্র খোলার শর্ত শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অক্টোবরে সবজির দাম লাগামছাড়া হয়ে উঠলেও নভেম্বরের শেষ দিকে এসে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে এই বাজারে।
বছরের শেষদিকে সংকটে পড়ে ভোজ্যতেলের বাজার। পরে দুই দফায় ১০ শতাংশ শুল্ক কমায় সরকার। পরে অবশ্য লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয় বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম। বছর জুড়ে যেভাবে বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়, সেভাবে বাড়েনি মজুরি। বাজারে গিয়ে তাই আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসেব মেলাতে হিমশিম খেয়েছে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্তকে।