বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মান বিশ্বের কোনো দেশের তুলনায় কম নয়। উন্নত দেশের মতো সুযোগ দেয়া গেলে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা নিজেদের যোগ্যতা বিশ্বে তুলে ধরতে পারবেন বলেছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ (৭ মার্চ) বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল এডুকেশন কনফারেন্স রুমে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন “চিকিৎসাক্ষেত্রে বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। এই সম্ভাবনাকে ঠিকভাবে কাজে না লাগিয়ে স্বাস্থ্যখাতে দিনের পর দিন উলটো কেবল দুর্নাম হয়েছে। কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ পারে না এমন কোন কাজ নেই। দেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মেধাবী চিকিৎসক ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে। তারা বেশিরভাগই উন্নত বিশ্বের ডাক্তারদের সমান দক্ষ। ডাক্তারদের সুযোগ দিলে তারা ভালো কাজ করে দেখিয়ে দেয়, এটা আমি জানি। এজন্য যথার্থ সুযোগ দিয়ে তাদের কাছ থেকে সঠিক কাজগুলো আদায় করে নিতে হবে। আজ (৭ মার্চ) বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল এডুকেশন কনফারেন্স রুমে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি আরোও বলেন, আর আমি আগেও বলেছি, প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কথা চিন্তা করে আমাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেছেন। আমি মন্ত্রী হওয়া মানে সব চিকিৎসকের জন্যই সম্মানের। সুতরাং আমাদের সকলের প্রতি সম্মানের এই মর্যাদা ধরে রাখতে আমাদেরকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে। মানুষকে দরদ দিয়ে সেবা করতে হবে। আর, এটাও বলে রাখি, ভালো করে কাজ না করলে কিংবা হাসপাতালে ঠিকভাবে অফিস না করলে, বা দায়িত্ব পালন না করলে আমি কিন্তু কারো কোন সুপারিশ মানবো না।”
চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে অসুবিধা থাকলে তা উপরের কর্মকর্তাকে জানাতে হবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “চিকিৎসকদেরকে কর্মক্ষেত্রে তাদের অসুবিধার কথাগুলো বলতে হবে। আমি মন্ত্রী হওয়ার আগে মন্ত্রণালয়ের পিওন থেকে উপর পর্যন্ত সব জায়গায় ঘুরেছি। কোথাও না পেলে আমি একেবারে প্রাইম মিনিস্টার পর্যন্ত চলে যেতাম। কিন্তু আমার কাজের জন্য যা প্রয়োজন তা আমি চাইতাম এবং আদায় করতাম। এক দড়জা থেকে অন্য দড়জা ঘুরতে ঘুরতেই মাত্র পাঁচটি বার্ণ বেড থেকে পাঁচশ বেডের বার্ণ হাসপাতাল করেছি। আপনাদেরকেও নিজের কাজের জন্য এভাবে আন্তরিক হতে হবে, মনে দরদ দিয়ে রোগীর সেবা করতে হবে।
চিকিৎসক শিক্ষকদের উদ্দেশে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “কোয়ালিটি ডাক্তার সংখ্যায় কম বের হলেও সমস্যা নেই। আপনারা কোয়ান্টিটি দেখবেন না, দেখবেন কোয়ালিটির দিকে।”
সভায় উপস্থিত উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন দাবী তুলে ধরে বক্তব্য রাখলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিভাগে বিভাগে আমরা ছুটে চলে যাচ্ছি কারন বিভাগীয় স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো জেনে সেখানেই যাতে সমাধান করা যায়। আপনাদের পক্ষ থেকে স্পেসেফিক দাবীগুলো জানাতে হবে। আমরা চেষ্টা করবো সব দাবী যাতে কমবেশি পুরণ করতে পারি।
সিলেট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এনায়েত হোসেন জানান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের জন্য পিডি নিয়োগ দেওয়া সহ কিছু লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন আছে।
বিএমএ মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্পর্কে বলেন, এই মন্ত্রী ডাক্তারদের নিজেদের মন্ত্রী। এই মন্ত্রীর আগামী পাঁচ বছর দেশের সব চিকিৎসকদের সৌভাগ্যের বছর। সবাই সহোযোগিতা করলে আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের স্মার্ট হেলথ ব্যবস্থাপনা আগামী পাঁচ বছর শেষ হবার অনেক আগেই সম্ভব হবে।
এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৭ই মার্চ উপলক্ষে সকাল সাড়ে সাত টায় সিলেট সিভিল সার্জন অফিসে যান এবং সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখানে সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের ৭ই মার্চের তাৎপর্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী সকাল নয় টায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনডোর ও আউটডোরে রোগীদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের চিকিৎসার খোঁজ নেন। পরে সিলেটের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন তিনি।
সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক শিশির রঞ্জনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম, সিলেট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এনায়েত হোসেন, বিএমএ কেন্দ্রীয় কমিটির মহাসচিব অধ্যাপক এহতেশামুল হক চৌধুরী, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ সহ বিএমএ সিলেট শাখার সভাপতি ও সম্পাদক, স্বাচিপ সিলেট শাখার সভাপতি ও সম্পাদক সহ বিভিন্ন স্তরের পেশাজীবি চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।