সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলের সম্মেলনকক্ষে কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে দরিদ্রদের অনিশ্চয়তা, অপর্যাপ্ত সাহায্যপ্রাপ্তি ও এলাকাভিত্তিক বৈষম্যের অভিজ্ঞতার বিবরণ নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। “পভার্টি ট্রানজিশানস অ্যান্ড সোশ্যাল প্রটেকশানঃ এক্সপেরিয়েন্স অফ অ্যান্ড অ্যাটিটিউডস টুওয়ার্ডস আরবান পভার্টি” শিরোনামের কর্মশালাটির আয়োজন করে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি। কর্মশালায় যুক্তরাজ্য সরকারের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট অফিসের (FCDO) কোভিড-১৯ লার্নিং, এভিডেন্স অ্যান্ড রিসার্চ প্রোগ্রামের (CLEAR) আওতায় করা একটি গবেষণার ফলাফল ও সুপারিশসমূহ তুলে ধরা হয়।
কোভিড-১৯ চলাকালীন বিআইজিডি-পিপিআরসি যে গবেষণা করেছিলো, এই গবেষণাটিতে সেখানকার তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। পরবর্তীতে এই গবেষণার অংশ হিসেবে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ঢাকার কল্যাণপুর এবং চট্টগ্রামের শান্তিনগর থেকে গবেষকগণ আরও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেন। নিম্ন-আয়ের এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের উচ্চ মাত্রার অনিশ্চয়তা, মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দারিদ্র্যের প্রভাব, বৈষম্যের অভিজ্ঞতা এবং অপর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা সহায়তার মতো বিষয়গুলো এ গবেষণায় তুলে ধরা হয়। প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ডঃ কিটি রোয়েলিন কর্মশালায় গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় উপস্থিত আলোচকবৃন্দ শহর এলাকায় সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণ, এলাকা ভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধ, সহায়তার মর্যাদাপূর্ণ বিতরণ নিশ্চিত করা এবং একটি সমন্বিত নীতি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
দু’ভাগে বিভক্ত কর্মশালার প্রথমার্ধে সভাপতিত্ব করেন জনাব এনএম জিয়াউল আলম, উপদেষ্টা, বিআইজিডি এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ সরকার। আলোচক হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের যুগ্ম প্রধান জনাব ড. মুনিরা বেগম। তিনি তাঁর বক্তব্যে সামাজিক সুরক্ষার ব্যাপারে সামগ্রিক কৌশল নেয়ার কথা উল্লেখ করেন।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)’র গবেষণা পরিচালক জনাব ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম তাঁর বক্তব্যে জানান যে, উচ্চ মাত্রার দারিদ্র্যের যে স্থায়িত্ব, তা শুধুমাত্র কোভিড-১৯-এর কারণে নয়। অন্যান্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক কারণ যেমন মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি সংকট এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপের কারণেও দারিদ্র্য বিদ্যমান।
জনাব এনএম জিয়াউল আলম বলেন যে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত তথ্য সরকারি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের পরিপূরক হতে পারে, তা নিয়ে বিতর্ক ছিলো। কিন্তু দুটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো একে অপরের পরিপূরক হওয়া প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ার্ধে আলোচক হিসেবে ছিলেন জনাব মোঃ কামরুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তর। তিনি বলেন যে, কেউই যাতে পিছিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিতকল্পে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
এছাড়াও এ পর্বে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জনাব মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন তিনি শহরের প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৯,৫০০ জন মানুষের উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং প্রতিদিন ২০০০ জন মানুষ প্রবেশের মত চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরেন।
জনাব মোঃ ইমামুল আজম শাহী, কর্মসূচী প্রধান, আরবান ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম, ব্র্যাক তাঁর বক্তব্যে দারিদ্র্য ও কোভিড-১৯ দ্বারা নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের প্রভাবিত হওয়ার ব্যাপারটি আমাদের মনে রাখা জরুরি বলে উল্লেখ করেন।
পরবর্তীতে জনাব মারজিয়ানা মাহফুজ নন্দিতা, অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) গবেষণাটির প্রশংসা করেন। এই গবেষণাটি মানুষের দারিদ্র্য ও সংকটকালীন মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আলোকপাত করেছে বলে তাঁর বক্তব্যে তিনি উল্লেখ করেন।
সমাপনী পর্বের সভাপতি জনাব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, বিআইজিডি এবং সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব, বাংলাদেশ সরকার বলেন, জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা নীতি একটি দূরদর্শী পরিকল্পনা ছিলো। সেখানে কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিলো। তবে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
কর্মশালায় বক্তারা জানান, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশে দরিদ্রতার হার বেড়েছে, বিশেষ করে শহর অঞ্চলে। দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির হার বাড়তে থাকা সামাজিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এই ধরণের সংকটের প্রভাব মোকাবেলা করতে এবং পরিবারগুলিকে অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষার্থে সামাজিক সুরক্ষা অত্যাবশ্যক। শহর অঞ্চলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচীর পরিসর বাড়ানো, শহরের নিম্ন-আয়ের এলাকার বাসিন্দাদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, সহায়তার মর্যাদাপূর্ণ বিতরণ নিশ্চিত করা ও সমন্বিত নীতির উদ্যোগ নেয়ার মত সুপারিশও উঠে আসে আলোচনায়।