ঢাকাশুক্রবার , ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

বিনামূল্যে সাঁতার শিখাচ্ছে সরকার অথচ ঢাকায় উচ্চ হারে টাকা আদায় করছে নগর কর্তৃপক্ষ

অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন
সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩ ৪:১৯ অপরাহ্ণ । ৬৩৪ জন

গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সুইমিং পুলের সাঁতার শেখাতে জনপ্রতি ৬০০০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা আগে ছিল ৩০০০ টাকা। আগে প্রতিদিন সাঁতার কাটাতে ৩০০ টাকা নিতো পরে তা ৫০০ করা হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে সরকার যেখানে কোটি টাকা খরচ করে দেশব্যাপী শিশুদের সাঁতার শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে সিটি কর্পোরেশন কেনো এত উচ্চহারে টাকা নিচ্ছে। আসলেই কি টাকা সিটি কর্পোরেশন পাচ্ছে, না অন্য কেউ নিচ্ছে। কোন নীতি বা আইনের আলোকে এ ফি নির্ধারণ করা হয়েছে, এ প্রশ্লের উত্তর খোঁজা জরুরি।

অনেকেই বলতে পারেন, গুলশানের লোকজন এত টাকা দিত পারবে। বিষয়টা হচ্ছে এ সুইমিংপুল শুধু গুলশানের লোকজনের না। এটা আশে পাশের লোকজনের, যেখানে স্বল্প আয়ের লোকজনও থাকেন। এ মাঠ ও পার্ক সকল মানুষের। মাঠ, পার্কগুলো জনগণের সম্পদ, কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য জনগণের সম্পদ ব্যবহার করা বা ব্যবহারের জন্য সীমিত করা অসংবিধানিক ও বেআইনী।

যাক আবার ফিরে আসি, শিশুদের সাঁতার শেখা কেন জরুরি। সাঁতার শেখা কোনো বিলাসিতা নয়, শিশু মৃত্যুরোধ আর জনস্বাস্থ্য ভালো রাখার অন্যতম উপায়।   ইউনিসেফের তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। আমাদের দেশের এ মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যা মোট শিশুমৃত্যুর ২৮ ভাগ।

এই মৃত্যুহার কমাতে শিশুদের সাঁতার শেখাতে ২৭১ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৬ জেলার ৪৫টি উপজেলায় পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য আট হাজার সমাজভিত্তিক শিশু যত্ন কেন্দ্র করা হবে এবং প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার শিশুকে সাঁতার শেখাবে সরকার। জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও শিশু মৃত্যু রোধে সরকারের এ নীতিকে স্থানীয় সরকারেরও অনুসরণ করা জরুরি।

সিটি কর্পোরেশনগুলোর অন্যতম প্রধান দায়িত্ব জনস্বাস্থ্য রক্ষা। মাঠ, পার্ক, বিনোদনের স্থান তৈরি এ জনস্বাস্থ্য রক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু নগর পরিকল্পনায় এগুলোর নির্মাণ কিছুটা অগ্রাধিকার পেলেও ব্যবস্থাপনা অগ্রাধিকার পায়নি। ঢাকা ‍উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৫ হাজার ২৬৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা আর ছয় হাজার ৭৫১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ঢাকা দক্ষিনের বাজেট।

এই বিপুল বাজেটের মধ্যে পার্ক পরিচালনা শিশুদের সাঁতার শিখানের জন্য কিছু ব্যয় করতে পারছে না তা সত্যিই বিস্ময়ের। সিটি কর্পোরেশন যদি সুইমিং পুল না দিতে পারেন, তবে অন্তত পুকুরগুলো সংরক্ষণ করে দিতে পারে, যেখানে নাগরিকদের শিশুরা সাঁতার শিখবে। মহামান্য হাইকোর্ট-এর নির্দেশনা অনুসারে নগরে অবস্থিত পুকুরের তালিকা তৈরি ও সংরক্ষণ নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এছাড়া সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা আইনেও পুকুর সংরক্ষনকে এ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অন্তভুক্ত করা হয়েছে।

সাঁতার হচ্ছে একটি ভাল ব্যায়াম। সাঁতার জানলে পানির বিপদ থেকে জীবনকে রক্ষা করা যায়। সেইসাথে নিয়মিত সাঁতার চর্চার মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখা যায়।  শারীরিক নিরাপত্তা বা কোন রকম দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার পাশাপাশি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও সাঁতার শেখানো দরকার। সাঁতারে প্রচুর শক্তি প্রয়োজন হয়, তাই নিয়মিত সাঁতার কাটলে মাদক হতে মানুষ দূরে থাকবে।

নিয়মিত সাঁতারে হৃদপেশির কার্যক্ষমতা বাড়ে। সেইসঙ্গে বাড়ে ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা। পেশিগুলোও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। হাড়ের জোড়াগুলো সবল হয়। তাই শিশুর বাড়ন্ত শরীরের জন্য সাঁতার অত্যন্ত ভালো ব্যায়াম বলে। শিশুরা মোটা হয়ে যাচ্ছে। মোটা হয়ে যাওয়া শিশুর বাড়তি মেদ ঝরাতেও সাঁতার অত্যন্ত কার্যকর। সাঁতারে ঊর্ধ্বাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গের সব ধরনের অঙ্গের সমন্বয় একসঙ্গে ঘটে বলে অল্প সময়ে পুরো শরীরেরই ব্যায়াম হয়ে যায়।

ঢাকার মাঠ ও পার্কগুলোকে কিছু লোক বাণিজিক কেন্দ্রে পরিণত করছে।  আর এ কারণেই মাঠ পার্কে অতিরিক্ত চার্জ নেয়া হচ্ছে। নগর কর্তৃপক্ষ এগুলো বানানোর পর  ব্যবস্থাপনায় ব্যয় করতে চান না বা ব্যয় করার কোন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলতে পারেনি। মাঠ ও পার্ক ব্যবস্থাপনা নগর কর্তৃপক্ষে কোন অগ্রাধিকার কাজের মধ্যে এখনও নেই। আর এ সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে কিছু মানুষ।

এ মাঠ, পার্কগুলো দখল হচ্ছে, বিভিন্ন ক্লাবের নামে। পাবলিক এ মাঠের কোনায় প্রথমে একটি ক্লাব গড়ে উঠে স্থানীয় সকল দল, মত এবং কিছু ব্যবসায়ীদের সমর্থনে। তারপর তারা সেই মাঠ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় এক সময় দখল করে নেয়। এ মাঠে খেলাধূলা প্রশিক্ষণসহ নানা কাজের নামে মাঠগুলো উচ্চ চার্জ বাসায়। যা সাধারণ মানুষের জন্য প্রদান সম্ভব না।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পার্ক, খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানসমূহের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ একটি নীতিমালা তৈরি করেছে। এ নীতিমালা অনুসারে এ ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম বেআইনী। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে নগর কর্তৃপক্ষের মাঠ, পার্ক ব্যবস্থাপনায় কঠোর মনোযোগ দেয়া জরুরি। মাঠ, পার্ক ব্যবস্থাপনার নামে কোন ক্লাব বা কর্তৃপক্ষ যেনো এগুলোকে নিজেদের সম্পদ না বানাতে পারে সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন।