বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের (ডব্লিউএইচওএসইএআরও) নবনির্বাচিত আঞ্চলিক পরিচালক, বৈশ্বিক অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ আগামী পাঁচ বছরের জন্য আজ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।
তিনি তার দায়িত্ব গ্রহণ বক্তৃতায় তার উপর আস্থা রাখার জন্য দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান এবং কয়েকটি শীর্ষ অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন, যার মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য, নারী ও শিশুদের জন্য পদক্ষেপ এবং স্বাস্থ্যের জন্য প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, ১ জানুয়ারি, ২০২৪ তারিখে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের জন্য ডব্লিউএইচও আঞ্চলিক কমিটির ৭৬ তম অধিবেশনে সদস্য দেশগুলো সায়মা ওয়াজেদকে এই পদে মনোনীত করার পক্ষে ভোট দেয়।
পরে, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ডব্লিউএইচও নির্বাহী বোর্ডের ১৫৪ তম অধিবেশনে তার মনোনয়ন অনুমোদন করা হয়। সায়মা ওয়াজেদ ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের বিদায়ী আঞ্চলিক পরিচালক ডা. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং এর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ, ভুটান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং পূর্ব তিমুর নয়া দিল্লিতে ভোটগ্রহণে অংশ নেয়। বিশিষ্ট অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ আটটি ভোট পেয়েছিলেন। অপর প্রার্থী, নেপাল মনোনীত ডা. শম্ভু প্রসাদ আচার্য্য পেয়েছেন দুটি ভোট। তিনি বাংলাদেশের প্রথম এবং ডব্লিউএইচও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দ্বিতীয় মহিলা আঞ্চলিক পরিচালক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, বিশেষ করে অটিজমের ক্ষেত্রে তার ভূমিকার জন্য বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ডব্লিউএইচও এর মহাপরিচালকের উপদেষ্টা। সায়মা ওয়াজেদই প্রথম বাংলাদেশি যিনি ১৯৪৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক বিভাগের অংশ হিসেবে সৃষ্ট এই পদে অধিষ্ঠিত হলেন।
তিনি বাংলাদেশে অটিজম সচেতনতার প্রচারণার নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন সময়ে যখন পিতামাতারা সামাজিক কলঙ্কের কারণে তাদের সন্তানদের এই বিকাশজনিত অক্ষমতা নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার লুকিয়ে রাখতেন।
সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ব্যারি ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর করেন।
২০১৯ সাল থেকে তিনি মানসিক স্বাস্থ্য এবং অটিজম বিষয়ে ডব্লিউএইচও এর মহাপরিচালকের একজন উপদেষ্টা এবং ২০১৪ সাল থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ডব্লিউএইচও-এর বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য ছিলেন।
সায়মা ওয়াজেদকে ২০১৭ সালে ডব্লিউএইচও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অটিজম বিষয়ক শুভেচ্ছা দূত মনোনীত করা হয়েছিল। তিনি একই বছর অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার সম্পর্কিত ডব্লিউএইচও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কৌশলের সহ-লেখক ছিলেন। তিনি যুক্তরাজ্যের গ্লোবাল হেলথ প্রোগ্রাম চ্যাথাম হাউজের অ্যাসোসিয়েট ফেলো, বাংলাদেশের অটিজম ও এনডিডি বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন এবং সূচনা ফাউন্ডেশনে চেয়ারপারসন।
সায়মা ওয়াজেদ ২০১৪ সালে ডব্লিউএইচও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক কার্যালয় কর্তৃক ‘এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ’ পুরস্কার এবং ২০১৬ সালে ডক্টর ইব্রাহিম মেমোরিয়াল কাউন্সিল, বাংলাদেশ কর্তৃক অটিজম এবং নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার নিয়ে কাজ করার জন্য ইব্রাহিম মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন।
২০১৭ সালে সায়মা ওয়াজেদ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অটিজম নিয়ে কাজ করার জন্য মার্কিন সংস্থা শেমা কোলাইনু থেকে আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার পান। ২০১৯ সালে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম কর্তৃক ইনোভেটিভ উইমেন লিডারস ইন গ্লোবাল মেন্টাল হেলথ পুরস্কারে ভূষিত হন।