অবৈধপথে আসা বিদেশি সিগারেটের রমরমা ব্যবসায় ছেয়ে গেছে চট্টগ্রামের বাজার। এসব অবৈধ সিগারেটের বাজার বেশ বড় হলেও তা বন্ধ করার কোনো জোড়ালো উদ্যোগ নেই। এতে প্রতি মাসে কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। অবৈধপথে আসা এসব সিগারেটের মূল ঘাঁটি চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জ ও মদুনা ঘাট। এছাড়াও আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অসাধু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন দোকানে মাঠকর্মীদের দিয়ে সিগারেট বিক্রি করছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
জানা যায়, চট্টগ্রামে অবৈধ সিগারেট বাজারের একটা বড় অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দুটি প্রতিষ্ঠান। আর এ দুই প্রতিষ্ঠানের বড় অংশের মালিক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) সাবেক কাউন্সিলর আবদুস সবুর লিটন ও তার ভাই।
রিয়াজুদ্দিন বাজারসহ চট্টগ্রামের বড় বড় পাইকারি বাজারে অবাধে বিদেশি সিগারেট বিক্রি করছে বিজয় ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো ও তারা ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো। দীর্ঘদিন ধরে কোম্পানি দুটি সিগারেটের প্যাকেটে নকল ‘ব্যান্ড রোল’ লাগিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে আসছে। এ ছাড়াও সমুদ্র ও বিমানবন্দর দিয়ে মূলত কয়েকটি সক্রিয় চক্র মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এসব সিগারেট দেশে নিয়ে আসছে। আমদানির পর সেই সব সিগারেট চলে যায় নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের সিগারেট গলিতে। সেখান থেকে মূলত এসব সিগারেট চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের বিভিন্ন দোকানে ডানহিল, বেনসন এন্ড হেজেজ, ৫৫৫, মোর, ইজি- লাইট, ইজি স্পেশাল গোল্ড, মার্লবোরো, ওরিস, ব্ল্যাক, মন্ডসহ নানা ব্র্যান্ডের সিগারেট অনেকটা প্রকাশ্য বিক্রি হচ্ছে। এসব সিগারেট প্রবাসী ও অসাধু আমদানিকারকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন রিয়াজুদ্দিন বাজারের চোরাই সিগারেটকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেটের হাত ঘুরে বিভিন্ন মোড় এবং পাড়া মহল্লার দোকানে চলে যাচ্ছে এসব অবৈধ সিগারেট।
নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে বিদেশি সিগারেট আসে। বাজারের পান মার্কেট ও তিনপুলের মাথার প্রায় দোকানে পাইকারি দামে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দালালেরা এসব সিগারেট দিয়ে যায়, ক্রেতাও আছে। এখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় এসব সিগারেট বিক্রির জন্য নিয়ে যায় খুচরা ব্যবসায়ীরা। নগরীর বিভিন্ন টংয়ের দোকানগুলোতে এই সিগারেটগুলো খুচরা বিক্রি হয়।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মহানগর নগর পুলিশের (সিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘শুধু সিগারেট না অবৈধ সবকিছুর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা পুলিশও এসব নিয়ে কাজ করছে। আমাদেরকে কেউ তথ্য দিলে আমরা অভিযান করছি।’
তারেক আজিজ বলেন, গত মে মাসে আমাদের কোতোয়ালী থানা পুলিশ রিয়াজুদ্দিন বাজার থেকে অবৈধ ২১ লাখ টাকার বিদেশি সিগারেটসহ চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা তখন জানায়, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিতে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র নিষিদ্ধ বিদেশি সিগারেট বাজারজাত করছে। এসব অবৈধ সিগারেটের পাইকারি বাণিজ্যে কোটি টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও সিগারেট আমদানি করে আসছে। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে এসব সিগারেট এনে নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজারে বাজারজাত করে।