যশোরের ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজারের বেশি মানুষ দ্রুত পানি সরানোর দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। ‘পানি সরাও, জীবন বাঁচাও’, ‘অবিলম্বে টিআরএম (নদীতে জোয়ারাধার বাস্তবায়ন) চালু করো, আমডাঙা খাল সংস্কার করো’ স্লোগান নিয়ে সেখানে জড়ো হন তারা।
রবিবার (০৬ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকা যশোরের অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ‘ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির’ ব্যানারে সেখানে জড়ো হতে থাকেন। তারা পানি সরানোর দাবিতে নানা স্লোগান দিয়ে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে বক্তব্য দেন। এ অবস্থায় দুপুর ১টার দিকে ভবদহ পানিনিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদের মোবাইলে ভার্চুয়ালি অংশ নেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
উপদেষ্টা উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার নাগাদ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ একটি টিম ভবদহ অঞ্চলে যাবেন। তারা আপনাদের সঙ্গে কথা বলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান কীভাবে করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করবেন। এরপর বিষয়টি আমি উপদেষ্টা পরিষদে উত্থাপন করবো।’
তিনি বলেন, ‘এতদিন আমি আপনাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছি। এখন এই সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছে। সমাধান যেন আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে হয়, অবশ্যই তা নিশ্চিত করবো। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যেন এই সমস্যার সমাধানে কাজ করা হয় আপনাদের এই দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে বলতে চাই, এই বিষয়টি আমি তাদের সঙ্গেও আলোচনা করবো।’
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টার উত্থাপিত ভবদহ অঞ্চলে ব্যাংক ও এনজিওর সুদ মওকুফ, ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন। সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালীর সভাপতিত্বে অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত অধ্যাপক অনিল বিশ্বাস, প্রভাষক কানু বিশ্বাস, তারক বিশ্বাস, হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এ ছাড়া জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন বাসদ নেতা হাচিনুর রহমান, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের নেতা তসলিম উর রহমান, সিপিবি নেতা আমিনুর রহমান এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান প্রমুখ।
সমাবেশে সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বক্তৃতাকালে বলেন, শনিবার রাতে টেলিফোনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেছিলেন অবস্থান চলাকালে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে তিনি কথা বলবেন। কিন্তু আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম, জেলা প্রশাসক আমাদের সময় দেননি। তিনি এখানে এসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সামনে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেননি। সে কারণে তার উপস্থিতি ছাড়াই উপদেষ্টা জলাবদ্ধ মানুষের সামনে তার বক্তব্য রেখেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ তার বক্তব্য সরাসরি শুনেছেন।
ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, উপদেষ্টা খুব শিগগির তার মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইডব্লিউএমের প্রধান নির্বাহীসহ একটি টিম ভবদহ অঞ্চলে পাঠাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। তার এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধ ১০ লাখ মানুষের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা এবং ব্যাংক ও এনজিওদের সুদসহ ঋণের কিস্তি মওকুফের দাবি জানিয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, উপদেষ্টা সেগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
অবস্থান চলাকালে বেলা পৌনে ২টার দিকে জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম তার কার্যালয় থেকে নিচে নামেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দেওয়া স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। তিনি জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন। পরে সেগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।