ঢাকাসোমবার , ২৯ জুলাই ২০২৪
  • অন্যান্য

মেট্রোরেল চালু হতে আসলেই কী একবছর লাগবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ২৯, ২০২৪ ১:২৪ অপরাহ্ণ । ৫০ জন

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতাকারীদের হামলায় ঢাকার মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। মেট্রোরেলের এ দুই স্টেশন পুনরায় চালু হতে প্রায় এক বছর সময় লাগবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যদিও এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রোরেল স্টেশন দ্রুত চালু করতে জাপানের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে জাপান সরকার সহযোগিতা করলেও কী মেট্রোরেলের এ দুই স্টেশন চালু হতে আসলেই কী একবছর সময় লাগবে?

মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হতে কেন একবছর সময় লাগবে? এ বিষয়ে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) উপ-প্রকল্প পরিচালক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, একবছর তো একটা সময়ের কথা বলা হয়েছে মাত্র। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে আর কতদিন সময় লাগবে ঠিক করতে, এটা আসলে তদন্ত কমিটির ১০ কর্মদিবস শেষে প্রতিবেদন দেয়ার পর জানাতে পারব। তবে এ বিষয়ে কমিটিই ভালোভাবে বলতে পারবে।

তরফদার মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, মেট্রোরেল স্টেশনে সহিংসতায় ক্ষতি পরিমাণ জানতে তদন্ত কমিটি কাজ করছে, তারা প্রতিবেদন দিলেই বলা যাবে কতদিন লাগবে। তাদেরকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। কর্ম দিবস তো বেশিদিন হয়নি। অফিস তো বন্ধ ছিল। কর্মদিবস শুরু হওয়ার ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন তারা। তারাই আসলে বলতে পারবেন কতদিন লাগবে। আমি বলতে পারব না।

যেভাবে ভাঙচুর চালানো হয় মেট্রোরেল স্টেশনে। একটা ধারনা থেকে বলা হচ্ছে একবছর সময় লাগবে-এটি অস্বীকার করে ডিএমটিসিএলের জিএম (অপারেশন) মোহাম্মদ ইফতিখার হোসেন বলেন, ধারনা থেকে একবছর লাগবে এটি বলা হয়নি। আগে তো কাজ করা হয়েছে। সংহিসতায় যেসব জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে, সেগুলো আগে টেন্ডার করে আনা হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে একবছরের কথা বলা হয়েছে। তবে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের প্রতিবেদনের পর আসলে পুরোটা জানা যাবে। এটি তো টেকনিক্যাল বিষয়, পর্যবেক্ষণ না করে হঠাৎ করে বলে দেয়া যায় না। তদন্ত কমিটির তাদের প্রতিবেদন পেলেই কেবল, বলা যাবে কতদিন সময় লাগতে পারে।

এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কোম্পানি সচিব (যুগ্মসচিব) মোহাম্মদ আবদুর রউফের সঙ্গে।

তিনি বলেন, মেট্রোরেল স্টেশনের যেসব যন্ত্রাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা সবটাই বাহির থেকে আনতে হয়। এজন্য বাজেট লাগবে, টেন্ডার হবে। আরও অনেক নিয়ম মেনে কাজ করতে হবে। যার জন্য এতো সময় লাগবে। তবে তদন্ত প্রতিবেদনের আগে সঠিক সময় বলা যাচ্ছে না। যদি ১০ কর্মদিবসের মধ্যে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরুপণ করে, তদন্ত কমিটির সদস্যরা প্রতিবেদন জমা দেন; তাহলে আগামী সাপ্তাহের মধ্যে জানা যাবে মেট্রো কবে নাগাদ চলতে পারে। পুরোটাই নির্ভর করছে তাদের ওপর।

এ সময় মেট্রোরেল স্টেশনের সহিংসতায় ক্ষতি নিরূপণে ডিএমটিসিএলের আট সদস্যের যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার প্রধান অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যাল, টেলিকমিউনিকেশন অ্যান্ড ট্র্যাক) যুগ্ম সচিব মো. জাকারিয়ারে সঙ্গে কথা হয়।

তদন্ত কমিটির প্রধানের কাছে জানতে চাওয়া হয় মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হতে কেন একবছর সময় লাগবে? এর জবাবে মো. জাকারিয়া বলেন,
পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে একবছরের কথা বলা হয়েছে। আমরা গত পাঁচ থেকে ছয় বছরে মেট্রো স্টেশন ইন্সটল করেছি, তাতে পিএফআই (পাওয়ার ফ্যাক্টর ইমপ্রুভমেন্ট) আসতে আসতে এমনই সময় লেগে যায়। এখনও তো কোনো অর্ডার দেয়া হয়নি। আমাদের প্রজেক্ট চলমান আছে। এটার বাজেট কোথা থেকে আসবে, সেটারও একটা বিষয় আছে। সরকার অর্থায়ন করবে, নাকি জাইকার (জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা) অর্থায়নে হবে, সেটারও সিদ্ধান্তের বিষয় আছে।

জাপানের কাছে এরইমধ্যে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তদন্ত কমিটির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানোর পর এবং যদি জাপান সরকার যদি সহযোগিতা করে তাহলে সময়সীমা কমে আসতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মো. জাকারিয়া বলেন, ‘কমতে পারে তবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এখনও আমরা তদন্তকাজে পুরোপুরিভাবে হাত দিতে পারিনি। আমরা স্টেশন পরিদর্শন করেছি মাত্র। কিন্তু কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ তা নির্ণয় করতে পারিনি। বিভিন্ন এজেন্সি কাজ করছে তো। পুরো ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করার পর বলা যাবে।

আর জাইকার সহযোগিতার কথা যে বললেন, আমাদের পুরো মেট্রোরেলটাই তো হয়েছে জাইকার অর্থায়নে। এখন জাইকা যদি অর্থ দেয়ও আমাদের তা খরচ করতে ট্যারিফ কমিশনের অনুমতি লাগবে। দরপত্র লাগবে। তার আগে প্রকল্প আকারে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। ধরলাম বাজেট পেয়ে গেলাম, তারপর তা খরচের জন্য টেন্ডার করতে হবে। তারপর ওয়ার্ক অর্ডার নিতে হবে। এরপর কাজ হবে। সব মিলিয়ে এ প্রক্রিয়াটি একটি লম্বা সময়ের ব্যাপার। এসব কিছু বিবেচনা করেই এক বছর সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে’-বলে যোগ করেন তিনি।

কথা হয় ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিকের সঙ্গে।

তিনি বলেন, স্টেশনে ঢুকে দুর্বৃত্তরা সবকিছুতেই আঘাত করেছে। প্রয়োজনীয় সবকিছু নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছু তারা নিয়ে চলেও গেছে। এছাড়া যে জিনিসগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার অধিকাংশই মেরামতযোগ্য নয়। স্টেশনগুলো যেভাবে ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়েছে, তা ঠিক করতে ন্যূনতম একবছর বা তার বেশিও লাগতে পারে। কারণ এগুলো অর্ডার দিয়ে প্রোডাকশন করতে হয়।

এদিকে মেট্রোরেল সূত্রে জানা গেছে, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন পুনরায় চালু করতে প্রায় ৬ মাস থেকে এক বছর লেগে যাবে। এ স্টেশন দুটিতে সব ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি নতুন করে বসানো হবে। পাশাপাশি কারিগরি প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করতে হবে। মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ স্টেশনের ই-সিস্টেমের পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। এ সিস্টেম পুনরায় সচল করতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা লাগতে পারে। কাজীপাড়া স্টেশনের ই-সিস্টেম অর্ধেকের বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। এ স্টেশনের ই-সিস্টেম ঠিক হতেও ১০০ কোটি টাকার মতো ব্যয় হবে। ই-সিস্টেম ছাড়াও দুই স্টেশনে থাকা পাঞ্চ মেশিন, ভেন্ডিং মেশিন, বিভিন্ন ডিভাইস, কম্পিউটারসহ আরও অনেক জিনিসপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাও ঠিক করতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার লাগতে পারে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো।