নতুন প্রজন্মের কাছে মাছকে আকর্ষণীয় করার জন্য বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)-কে ‘রেডি টু কুক’ মৎস্যপণ্য উৎপাদন গবেষণা আরো জোরদার করতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং সেই সাথে মাছের স্বাদ অক্ষুণ্ন রেখে মৎস্য গবেষণা আরও বেগবান করতে হবে। বাংলাদেশে মাছ যেমন সম্পদ, তেমনি বিজ্ঞানীরা আমাদের দেশের বড় সম্পদ, মৎস্যজীবীরাও আমাদের সম্পদ।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকালে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউর সেচ ভবনে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) কর্তৃক আয়োজিত ’বার্ষিক গবেষণা অগ্রগতি (২০২৩-২৪) পর্যালোচনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন (২০২৪-২৫)’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
দেশের কোথায় কোথায় কোন্ ধরনের মাছ পাওয়া যায় বিএফআরআই-কে সে বিষয়ে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে উপদেষ্টা বলেন, গবেষণাভিত্তিক একটি মানচিত্র তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে আগামী প্রজন্মকে মাছ সম্পর্কে জানার জন্য খুবই সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে বিএফআরআই তাদের জার্নাল পাঠক পর্যায়ে বোধগম্য করার জন্য ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতে প্রকাশ করতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার বর্জ্য নদ-নদীকে দূষিত করছে, এর ফলে মাছে নানা ধরনের রোগ এমন কী মাছ মারা যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নোনা পানি মিঠা পানিতে মিশছে, নানা রকমের প্রতিকূল পরিবেশে মাছের কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে এবং তা দূরীকরণে বিএফআরআই-কে গবেষণা করা দরকার। অন্যদিকে আমরা মাছ রপ্তানি করতে চাই, কিন্তু পরিবেশ বিপন্ন করে মাছ উজাড় করে রপ্তানি সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেসব উন্নয়ন ও অগ্রগতি বা প্রাতিষ্ঠানিক ডাটা উপস্থাপন করা হয় এতে আমরা মুগ্ধ নই। আমাদের দেখতে হবে- আমিষের যে চাহিদা পূরণ করতে চাচ্ছি, তা পূরণ করতে পারছি কিনা-তা জানা দরকার। এক্ষেত্রে বিএফআরআই’র ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কোন্ কাজ কতটুকু ভালোভাবে করতে পারছি-এর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এটিএম মোস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট হারিয়ে যাওয়া দেশীয় প্রজাতির অনেক মাছ ফিরিয়ে এনেছে। দেশীয় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে আরও বেশি মাছ কীভাবে সাধারণ মানুষের নিকট পৌঁছানো যায়- তা নিয়ে বিএফআরআই-কে গবেষণা করতে হবে।
দিনব্যাপী এ কর্মশালায় চারটি কারিগরি অধিবেশনে মোট ৫১টি গবেষণা ফলাফল ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়। মাছের কৃত্রিম প্রজনন কৌশল উদ্ভাবন, খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা ও ভ্যাকসিন উদ্ভাবন, ইলিশ সম্পদসহ অন্যান্য মুক্ত জলাশয়ে মাছের সহনশীলতা ও উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, মজুদ নির্ধারণ এবং টেকসই আহরণ, সামুদ্রিক শৈবাল ও এর গুণাগুণ, বিভিন্ন সামুদ্রিক ও উপকূলীয় মাছের উৎপাদন, আহরণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রাপ্ত ফলাফল উক্ত কর্মশালায় উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণের জন্য বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ মতামতের আলোকে ভবিষ্যৎ করণীয় কী- তা নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ জিল্লুর রহমান। এছাড়া মৎস্য গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের শতাধিক বিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, মৎস্যচাষী ও জেলে প্রতিনিধি ও উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন পেশার শতাধিক প্রতিনিধি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।