ঢাকাশনিবার , ৯ মার্চ ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

রোগীদের মৃত্যু ঠেকাতে ‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’র দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ৯, ২০২৪ ৪:২৩ অপরাহ্ণ । ১১১ জন

কিডনি রোগীদের মৃত্যু ঠেকাতে ও সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনতে ‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’ চালুর দাবি জানিয়েছে কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)। আজ শনিবার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘কিডনি চিকিৎসায় সমঅধিকার অর্জনে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।

‘বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৪’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ক্যাম্পস’ এই বৈঠকের আয়োজন করে।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পসের প্রতিষ্ঠা ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ তিনি বলেন, কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চিকিৎসা করতে গিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। অনেকে টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারে না। ফলে কিনডি রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়। উন্নত দেশগুলোতে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন স্বাস্থ্যবিমার মাধ্যমে হয়। রোগীর পকেট থেকে দিতে হয় না। পাশের দেশগুলোতে আংশিক খরচ সরকার বহন করে থাকে। আশা করি, শিগগিরই আমাদের দেশে ‘কিডনি সুরক্ষা বিমা’ চালু হবে। এটা হলে হয়তো কিডনি রোগীদের মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে এবং সবাইকে চিকিৎসার আওতায় আনা যাবে।

ডা. সামাদ বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি-বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করবে। বর্তমানে ৮৫ কোটির বেশি লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য, এরমধ্যে ৭৫ কোটি রোগী জানে না যে, মরণঘাতী কিডনি রোগ নীরবে তাদের কিডনি নষ্ট করে চলেছে। প্রতি বছর ১ কোটি ৩০ লাখ লোক আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত হন, যার ৮৫ ভাগই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। উন্নত দেশে কিডনি বিকলের চিকিৎসা করতে গিয়ে সরকার হিমশিম খাচ্ছে।’

বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার শতকরা ১৬-১৮ ভাগ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ১০ জন কিডনি বিকল রোগী তা বহন করতে পারে না। তাই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৯০ ভাগ রোগী বিনা চিকিৎসায়, অথবা আংশিক চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে। পক্ষান্তরে, সবাই যদি কিডনি রোগের ব্যাপকতা, ভয়াবহতা, পরিণতি ও কারণ সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং স্বাস্থ্য সম্মত জীবনযাপন করে— তা হলে ৫০-৬০ ভাগ ক্ষেত্রে এই মরণঘাতী কিডনি-বিকল প্রতিরোধ করা সম্ভব।

কিনডি রোগ প্রতিরোধে পরামর্শ তুলে ধরে ডা. সামাদ বলেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম ও কায়িক পরিশ্রম করা, পরিমিত স্বাস্থ্যসম্মত বা সুষম খাবার গ্রহণ, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান পরিহার করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা, তীব্র মাত্রার ব্যথার ওষুধ পরিহার করা। তাছাড়া যারা ঝুঁকিতে আছেন যেমন- যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বেশি, বংশে কিডনি রোগ আছে, যারা ধূমপায়ী, যারা তীব্র মাত্রার ব্যথার ওষুধ খেয়েছেন, যাদের পূর্বে কোনও কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে, তাদের বছরে অন্তত ২ বার প্রস্রাব ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করে নেয়া উচিত। কেননা, প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, রোগ হয়ে গেলে অনেক ঝামেলা। আমাদের টার্গেট থাকবে কিডনি রোগ হওয়ার আগে সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা। এ সময় সাংবাদিক, ধর্মীয় গুরু, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাকসহ সমাজের নেতৃত্ব পর্যায়ের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

কিডনি রোগকে ‘নীরব দুর্যোগ’ বলে উল্লেখ করে কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন উর রশিদ বলেন, ‘এ রোগের জটিলতা ও চিকিৎসা ব্যয়ের আধিক্য বিবেচনায় প্রতিরোধকেই একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ রয়েছে— যারা বিভিন্ন ধাপে কিনডি রোগে আক্রান্ত। সমঅধিকার যদি চাই, তাহলে বিমা ছাড়া কোনও উপায় নাই। একজন মানুষ চিকিৎসা করতে গিয়ে কেন দেউলিয়া হবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সেদিকে নজর রাখতে হবে।’

জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, ‘কিডনি রোগ ৭০-৮০ ভাগ প্রতিরোধে সম্ভব। আমরা প্রতিরোধের কথা বলি, মানুষ শুনছে না। কিন্তু আমরা কেউ গবেষণা করিনি যে, কোনভাবে বললে মানুষ শুনবে।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল, পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেন, সাবেক ক্রিকেটার গাজী আশরাফ হোসেন প্রমুখ।