রোগ ছড়ানো মশা নির্মূলে একটি নতুন উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থা। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে জিন সম্পাদনার মাধ্যমে পুরুষ মশাদের মধ্যে এমন এক ধরনের জিন প্রবেশ করানো হবে যা রোগবাহী স্ত্রী মশার সংখ্যা কমাতে কার্যকর।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিএসআইআরও) ও যুক্তরাজ্যের বায়োটেকনোলজি কোম্পানি অক্সিটেকের যৌথ উদ্যোগে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে অক্সিটেক অস্ট্রেলিয়া।
ডেঙ্গু জ্বর, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস ও হলুদ জ্বরের বিস্তার রোধে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভাইরাস বহনকারী সবচেয়ে মারাত্মক দুটি প্রজাতির মশা- এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাসকে লক্ষ্য করে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
অক্সিটেক অস্ট্রেলিয়ার পরীক্ষায় দেখা গেছে, ল্যাবে এডিস ইজিপ্টি মশার জিন সম্পাদনার পর সেগুলোকে বনে ছেড়ে দেওয়ার পর বিশেষ ওই পুরুষ মশাগুলো বনের স্ত্রী মশাদের সঙ্গে মিলনের ফলে যে বাচ্চার জন্ম দেয়, সেগুলোও টিটিএভি (TAV) নামক প্রোটিনযুক্ত বিশেষ ওই জিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে।
ওই প্রোটিন স্ত্রী বাচ্চাগুলোকে মেরে ফেলে, তবে পুরুষগুলোর ক্ষতি করে না।
এই পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ডে একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি রোধের উদ্দেশে এশিয়ান টাইগার মশা, এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার বিস্তার রোধেও কাজ শুরু করেছে অক্সিটেক অস্ট্রেলিয়া।
নতুন এই উদ্যোগটিকে আক্রমণাত্মক ও বহিরাগত কীটপতঙ্গের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দারুণ সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেছেন সিএসআইআরওর স্বাস্থ্য ও বায়োসিকিউরিটি বিষয়ক পরিচালক ব্রেট সাটন।
তিনি বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেভাবে কীটনাশক-বিরোধী কীটপতঙ্গের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, তাতে অস্ট্রেলিয়ান ও এই অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি প্রতিনিয়ত আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।’
নতুন প্রযুক্তিটি গবাদি পশু ও ফসলসহ আমাদের খাদ্য ব্যবস্থার ওপর হুমকিস্বরূপ কীটপতঙ্গের বিস্তার রোধের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কীটপতঙ্গ-বাহিত রোগগুলো মোট সংক্রামক রোগের ১৭ শতাংশেরও বেশি। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী ৭ লাখের বেশি মানুষ কীটপতঙ্গ-বাহিত রোগে মৃত্যুবরণ করে। এর মধ্যে, কেবল এডিস মশাবাহী ডেঙ্গু জ্বরেই প্রতি বছর অন্তত ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।