ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

শহরাঞ্চলে তামাক-ধূমপানমুক্ত পাবলিক প্লেস নিশ্চিতের আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৫ ৬:৩৯ অপরাহ্ণ । ১০ জন

বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বর্ণিত পাবলিক প্লেসকে তামাক ও ধূমপানমুক্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অধিকাংশ পাবলিক প্লেসে অবাধে তামাক ও ধোঁয়াযুক্ত তামাক ব্যবহার করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষক, নীতিনির্ধারক, উন্নয়ন অংশীদার এবং তামাক-নিয়ন্ত্রণে কর্মরত বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে পরোক্ষ ধূমপান প্রতিরোধে “তামাক-ধোঁয়ামুক্ত শহর” শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) রাজধানীর গোল্ডেন টিউলিপ হোটেলে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্ক এর সহায়তায় বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক ফাউন্ডেশন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা শহরাঞ্চলে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩) অনুযায়ী পাবলিক প্লেস তথা জনসমাগমের জায়গাগুলোকে ধূমপান মুক্ত রাখার উপর জোরারোপ করেন।

এই গবেষণার উদ্দেশ্য হলো, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও নরসিংদীর স্থানীয় সরকার এবং জনগণের সাথে মিলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ‘পাবলিক প্লেস’ তামাক-ধোঁয়ামুক্ত করণের লক্ষ্যে কাজ করা। সম্পূর্ণ কার্যপ্রক্রিয়ায় বিভিন্ন গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করে তামাক ব্যবহার প্রতিরোধ ও পরোক্ষ ধূমপান হ্রাস করতে শহুরে এলাকা ও জনগণের উপর এই গবেষণা প্রকল্পের প্রভাব নির্ণয় করা হবে।

অনুষ্ঠানে্র বিশেষ অতিথি ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান বলেন, “বর্তমানে শহরাঞ্চলে অসংক্রামক রোগের প্রাদূর্ভাব বেড়েই চলেছে। তামাকের ব্যবহার দ্রুত নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে আসতে পারলে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে।”

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণের সেলের প্রোগ্রাম অফিসার ডা. মোঃ ফরহাদুর রেজা বলেন, “তামাক-ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য সর্বপ্রথম সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে এবং সকল সরকারী ভবন শতভাগ তামাকমুক্ত ঘোষণা করতে পারলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও একই পদ্ধতিতে তামাক-ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদা আলী বলেন, “ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বাজেট ব্যবহার করে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কাজের জন্য সকলের সহযোগিতা কাম্য।”

প্রাথমিক স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক মোরশেদ বিপুল ঢাকা শহরে শিশু ও শিক্ষার্থীদের পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হওয়ার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকার ৩৪২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরোক্ষ ধূমপান থেকে মুক্ত করা ও তামাক-ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ উপহার দিতে তারা কাজ করবেন।

ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার গণপরিবহনে তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ জোর দাবি জানান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোঃ হেমায়েত উদ্দিন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গণপরিবহনে তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে অভিযানের উপর গুরত্বারোপ করেন এবং পাশাপাশি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইনের খসড়া প্রস্তুতের কথা জানান।

বাংলাদেশে তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে গবেষণা কার্যক্রমের অপ্রতুলতার কথা উল্লেখ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মীর আলমগীর হোসেন তামাক-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে গবেষণা বৃদ্ধিতে আহ্বান জানান। পাশাপাশি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন ট্রেন স্টেশন ধূমপানমুক্ত করার সফলতার কথা উল্লেখ করে তিনি অন্যান্য সরকারী সংস্থাগুলোকেও তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

গবেষণা প্রকল্পের প্রধান গবেষক যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্কের অধ্যাপক হেলেন এলসি বলেন, “নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। বাংলাদেশে বিদ্যমান তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেসসমূহ তামাক-ধোঁয়ামুক্ত করার জন্য সকল পর্যায়ের অংশীজনের যৌথ সহযোগিতা প্রয়োজন। এই গবেষণা প্রকল্পের ফলাফল সরকারকে বিভিন্ন পাবলিক প্লেস তামাক-ধোঁয়ামুক্ত করতে সাহায্য করবে”।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রুমানা হক তার সমাপনী বক্তব্যে তামাক-ধোঁয়ামুক্ত পাবলিক প্লেস তৈরি করতে সকল সচেতন মহলকে এগিয়ে আসার বিনীত আহ্বান জানান।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে ভাইটাল স্ট্রাটেজিসের জৈষ্ঠ্য কারিগরি পরামর্শক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ অফিস, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।