ঢাকাবুধবার , ৩০ আগস্ট ২০২৩

‘শিক্ষিত বেকার কমাতে শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান সহায়তা কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন’

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ৩০, ২০২৩ ১:১৩ পূর্বাহ্ণ । ৩২০ জন

দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং শিক্ষিত বেকার কমাতে শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান সহায়তা কাউন্সিল গঠন এবং দুই খাতের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। আজ ২৯ আগস্ট ২০২৩ আগারগাঁও পর্যটন ভবনে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং জার্মান উন্নয়ন সংস্থা Friedrich-Ebert-Stiftung (FES), Bangladesh-এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের এসএমই উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা’ পলিসি ব্রিফিং অনুষ্ঠানে এসব পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. কামাল হোসেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার।

এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. মফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন সিদ্দিকী। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে শ্রমশক্তি রয়েছে ৬ কোটি ৩৫ লাখ, প্রতি বছর যা শতকরা ২.২ ভাগ হারে বাড়ছে। অথচ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএস-এর হিসাবে, দেশে স্নাতক পাস করা বেকার শতকরা ৬৬ ভাগ। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাংকের জরিপ বলছে, শতকরা ৪৬ ভাগ চাকরিদাতা চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা পান না এবং ৬৯ ভাগ চাকরিদাতা জানান, কারিগরি ও ব্যবস্থাপক পদের বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংকট ব্যাপক।

শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাঝে প্রয়োজনীয় সহায়তার অভাবকেই এই সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করে প্রবন্ধকার বলেন, আরো একটি কারণ, গবেষণা খাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কম বিনিয়োগ। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের ২০২০ সালের হিসাব বলছে, ১৪২ সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় বছরে গড় ব্যয় মাত্র ১.২৬ কোটি টাকা। তবে শীর্ষ ১০ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বছরে ১০১ কোটি টাকা ব্যয়ের বিপরীতে শীর্ষ ১০ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে ব্যয় করে মাত্র ৪৩ কোটি টাকা।

ফলে ২০২০ সালের বিশ্ব উদ্ভাবন সূচকে ১৩১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৬তম আর ভারত ৪৮তম অবস্থানে। আর ২০২১ সালের বিশ্ব জ্ঞান সূচকে ১৫৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১২০তম, যেখানে বিবেচিত ৭টি বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা গবেষণায়, ১০০ পয়েন্টের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ১৯.২। বিআইডিএস-এর গবেষণা বলছে, বাংলাদেশের কৃষি-খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, ইলেকট্রনিক্স, নির্মাণ, হালকা প্রকৌশল, আইসিটি, তৈরি পোশাক, পর্যটন, জাহাজ নির্মাণ, চামড়া ও জুতা, নার্সিং, ফার্নিচার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ওষুধ, পাট ও প্লাস্টিক-এই ১৫টি খাতের শ্রমশক্তির দক্ষতার সংকট প্রকট।

অথচ বছরে শতকরা মাত্র ৩.৬৫ ভাগ শ্রমশক্তি দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়। এক্ষেত্রে শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাঝে অন্তত ৮টি ক্ষেত্রে সহায়তার অভাবের কথা উল্লেখ করা হয় প্রবন্ধে:
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিক্যুলাম শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়;
২. শিল্প প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবীশরা প্রয়োজনীয় কাজের পরিবেশ পায়না;
৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিল্প খাতের দক্ষতা কম;
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কোর্স ও মূল্যায়ন পদ্ধতি না থাকা;
৫. দক্ষতা, কাজ ও যোগ্যতার সংকট;
৬. শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের মাঝে সমন্বয় সেল না থাকা;
৭. শিল্প খাতের কাছে শিক্ষার্থীদের অবাস্তব প্রত্যাশা; এবং
৮. শিল্প মালিকদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিক্যুলাম তৈরির সাথে সম্পৃক্ত না থাকা।
সমস্যা সমাধানে মালয়েশিয়ার আদলে বাংলাদেশেও জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়-শিল্প প্রতিষ্ঠান উচ্চ শিক্ষা সহায়তা কাউন্সিল গঠনের পরামর্শ দেয়া হয় অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে দেশের এসএমই উদ্যোক্তা, চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গবেষক, অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিগণ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনগণ অংশগ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন এসএমই খাত ও উপখাত সম্পর্কে সম্যক ধারণা অর্জন, কার্যকর কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য এসএমই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন খাতের ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি ফাউন্ডেশন বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেমিনার/কর্মশালা আয়োজন করে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এসএমই ফাউন্ডেশন এবং জার্মান উন্নয়ন সংস্থা FES Bangladesh-এর যৌথ উদ্যোগে এই পলিসি ব্রিফিং অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।