বন্যাকবলিত শেরপুর জেলার বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে আরও ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতরা হলেন- উরফা ইউনিয়নের কুড়াকান্দা গ্রামের মুক্তার হোসেন (৫০), গণপদ্দি ইউনিয়নের গজারিয়া কিংকরপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৬০) ও নকলা উপজেলার জালালপুর গ্রামের উজ্জ্বল মিয়া (৩৫)। এই নিয়ে পাহাড়ি ঢলে গত ৪ দিনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮ জনে। পাহাড়ি ঢলে এখনও প্রায় শতাধিক গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়াও চলতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের পাঁচটি উপজেলায় ৪৬ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমির রোপা আমন আবাদ, ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির সবজি আবাদ, বস্তায় চাষ করা ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৪ বস্তা আদা সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে জেলায় অন্তত ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৩০ জন কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হলেও, নকলা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বন্যার পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি জানান, বটকুচি ও নালিতাবাড়ী বাজার পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ৭৭ ও ১৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জল পরিমাপক পয়েন্ট না থাকলেও পাহাড়ি মহারাশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানিপ্রবাহও স্বাভাবিক হয়েছে।
পাহাড়ে ভারী বৃষ্টিপাত না হলে নদ-নদীর পানি আরও কমবে এবং দু-একদিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে পূর্বাভাস দেন এই প্রকৌশলী।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওবায়দুল্লাহ জানান, বন্যার কারণে জেলার ২৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, চলতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের পাঁচটি উপজেলায় ৪৬ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমির রোপা আমন আবাদ, ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির সবজি আবাদ, বস্তায় চাষ করা ৪ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৪ বস্তা আদা সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে জেলায় অন্তত ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৩০ জন কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
জেলার বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সোনবাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি, পুলিশ, রেডক্রিসেন্ট ইয়ুথ ভলান্টিয়ার, বেসরকাারি স্বেচ্ছাসেবীরা পানিবন্দিদের উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। অসহায় বন্যার্তদের মাঝে সরকারিভাবে ত্রাণসামগ্রী, শুকনা খাবার ও পানি বিতরণ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসনে পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চাল-ডাল, তেল, আলু, মুড়ি, মোমবাতি, দিয়াশলাইসহ ১২ হাজার ব্যাগ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। আরও পাঁচ হাজার ব্যাগ প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিপদাপন্নদের উদ্ধার করে নিরাপদে রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বন্যার্তদের প্রয়োজনে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। পানি পুরোপুরিভাবে নামার পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুণর্বাসন সহায়তাও করা হবে। ইতোমধ্যে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।