ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সংরক্ষণ-বিপণনে আনবে গতি তৈরি হবে রপ্তানির সুযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৯, ২০২৪ ১২:৪৩ অপরাহ্ণ । ১১৫ জন

কৃষকের উৎপাদিত আলুর যথাযথ গ্রেডিং এবং সংরক্ষণের অভাবে এই আলু অপচয় হচ্ছে। দেশ হারিয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়ার সুযোগ। এ সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক দল গবেষক উদ্ভাবন করেছেন স্বয়ংক্রিয় আলু বাছাই করার যন্ত্র (অটোমেটেড রিয়েল টাইম পটেটো গ্রেডিং মেশিন)।

যন্ত্রটির উদ্ভাবকরা জানান, আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে দেশের কৃষকরা এখনও উৎপাদিত আলু সংগ্রহ এবং গ্রেডিং করেন হাতে হাতে ও চোখের আন্দাজে। যথাযথভাবে বাছাই করতে না পারায় আলু বাজারজাতে তারা যেমন অসুবিধায় পড়েন আবার অন্য দেশের চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানিযোগ্যও করতে পারেন না। অথচ কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন টনের অভ্যন্তরীণ চাহিদার বিপরীতে আলু উৎপাদন হয় ১১ মিলিয়ন টনের বেশি। বাজারদর অনুযায়ী প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাকি ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন আলু রপ্তানি করা যেত। কিন্তু যথাযথ গ্রেডিং এবং সংরক্ষণের অভাবে এই আলু অপচয় হয়েছে। দেশ হারিয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ‍মুদ্রা পাওয়ার সুযোগ। এ জন্যই তারা আলু বাছাইয়ের যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছেন।

গবেষক দলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের সভাপতি ড. আনিসুর রহমান বলেন, ক্ষেত থেকে আলু তোলার পর আকার, রং ও ত্রুটি অনুযায়ী বাছাই (গ্রেডিং) করা অন্যতম প্রধান কাজ। খালি চোখে ও কোনো ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া আলু গ্রেডিং করা হলে সংরক্ষণ ও বাজারজাতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয়। উদ্ভাবিত গ্রেডিং যন্ত্রটি এ সমস্যা দূর করবে। স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটির ছবি প্রক্রিয়াকরণ অংশ প্রতিটি আলুর ছবি নেবে। এরপর কম্পিউটারের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত দেবে কোন আলু কোন গ্রেডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ ছাড়া সাধারণভাবে ধরা না পড়া ত্রুটিযুক্ত আলুও বাছাই করবে এ যন্ত্র।

এ গবেষক আরও জানান, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটিতে রয়েছে মোটরচালিত ৭ ফুট দীর্ঘ ও ১.৫ ফুট প্রস্থের কনভেয়ার বেল্ট, ছবি তোলা ও তা বিশ্লেষণ করে আলুর আকার নির্ধারণে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ক্যামেরা, এলইডি লাইটিং সিস্টেম এবং প্রতিটি গ্রেডের আলুকে সুনির্ধারিত স্থানে রাখতে সার্ভো মোটর ও মাইক্রোকন্ট্রোলারের সমন্বয়ে নিক্ষেপণ মাধ্যম। যন্ত্রটিতে ছবি বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ম্যাটল্যাব প্রোগ্রাম, যা খুবই সহজে ও দ্রুত আকার নির্ধারণ এবং পূর্বনির্ধারিত আলুর আকারের সঙ্গে তুলনা করে সিদ্ধান্ত দিতে পারবে। এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিন আকারের আলু বাছাই করা যাবে। কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় হাতে গ্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে দৃষ্টিগোচর না হওয়া সব ত্রুটিও ধরা পড়বে। ফলে আলু যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার সুযোগ তৈরি হবে এবং বাজারজাত ও রপ্তানির সময় আর বাছাইয়ের প্রয়োজন হবে না।

বাকৃবির রিসার্চ সিস্টেমের অর্থায়নে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় উদ্ভাবিত যন্ত্রটি নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রিসিশন এগ্রিকালচার ল্যাবে। গবেষণার ফলে দেখা যায়, ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের আলু বাছাইয়ে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রটির সফলতা হার ৮৬ শতাংশ। ঘণ্টায় এটি ৩০-৩৫ কেজি আলু গ্রেডিং করতে পারে। যন্ত্রটির কার্যকারিতা আরও বৃদ্ধি করতে এবং সময় কমিয়ে আনতে তারা কাজ করছেন। যন্ত্রটি কৃষকের সময় ও শ্রম যেমন লাঘব করবে পাশাপাশি দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে আলু রপ্তানির সুযোগ তৈরি করবে।