ঢাকাশনিবার , ১০ আগস্ট ২০২৪
  • অন্যান্য

সরকারি গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ আছে ১৮ লাখ টন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ১০, ২০২৪ ১১:৫৮ পূর্বাহ্ণ । ৩০ জন

প্রধান খাদ্যশস্য চালের মজুদ চার মাসে বেড়ে হয়েছে দেড় গুণেরও বেশি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশে চালের মজুদ এখন প্রায় ১৩ লাখ টন। এর সঙ্গে ধান ও গম মিলিয়ে খাদ্যশস্যের মোট মজুদ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ টনেরও বেশিতে।

দেশে খাদ্যশস্যের বর্তমান মজুদকে ‘সন্তোষজনক’ মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, চাল উৎপাদন ভালো হওয়ায় ন্যূনতম প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সরকারি মজুদ রয়েছে। এ কারণে সদ্য দায়িত্ব নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বাজার ব্যবস্থাপনায় বেগ পেতে হবে না। আবার যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও সচল হয়েছে। ফলে পণ্যের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ সংকটের কোনো শঙ্কা আপাতত নেই। এ কারণে চাল আমদানিরও কোনো প্রয়োজন পড়বে না। তবে মসলাপণ্য ও সার আমদানির জন্য বিকল্প উৎস তৈরির পাশাপাশি ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশে মোট খাদ্যশস্যের মজুদ ছিল ১৮ লাখ ৯ হাজার ৮৫৭ টন। এর মধ্যে চাল মজুদ রয়েছে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৪ টন। গম মজুদ ছিল ৪ লাখ ১৬ হাজার ৬৯৩ আর ধান মজুদ ছিল ১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৮ টন। ধানকে চাল আকারে মোট মজুদে অন্তর্ভুক্ত দেখানো হয়েছে। গত এপ্রিলেও দেশের সরকারি গুদামগুলোয় চালের মোট মজুদ ছিল ৮ লাখ ৭৭ হাজার টন। এদিকে গত রবি মৌসুমে দেশে গম উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৯৮ হাজার টন। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ লাখ ২৮ হাজার টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় কাছাকাছি গম উৎপাদন হয়েছিল।

সাধারণত আমন ও বোরো দুই মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, গত আমন মৌসুমে চাল উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টন, যা বিগত যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। এছাড়া গত বোরো মৌসুমেও রেকর্ড চাল উৎপাদন হয়েছিল। ২ লাখ ২২ হাজার টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ২৪ হাজার টন। চাল উৎপাদনের এমন রেকর্ড সৃষ্টি হওয়ায় গত অর্থবছর কোনো চাল আমদানি করতে হয়নি।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, গত অর্থবছরে দেশে সরকারিভাবে কোনো চাল আমদানি করা হয়নি। যদিও ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১০ লাখ ৫৬ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয় ৫০ লাখ টন। এর মধ্যে চাল ছিল ৯ লাখ ৮৮ হাজার টন। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়।

এদিকে গত কয়েক দিনের আন্দোলন ও করফিউকে কেন্দ্র করে পণ্য পরিবহন প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে সরবরাহ কমে গিয়ে চালের দাম কিছুটা বেড়েছিল। মোটা ও সরু চালের দাম কেজিপ্রতি ২-১ টাকা বেড়েছিল। তবে বাড়তি দাম এখনো কমেনি। এজন্য সরবরাহ সংকট ও মিলারদের দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

কারওয়ান বাজারে গতকাল মোটা চাল (ব্রি ২৮) বিক্রি হচ্ছিল ৫৩ টাকা কেজি দরে, যা একদিন আগেও ছিল ৫২ টাকা কেজি। চিকন বা সরু চাল বিক্রি হচ্ছিল ৬৬-৬৭ টাকা কেজি দরে, যা একদিন আগেও ছিল ৬৩-৬৪ টাকা। দাম বাড়ার কারণ নিয়ে রানা রাইস এজেন্সির বিক্রেতা মুহাম্মদ ফোরকান বলেন, ‘সরবরাহ কিছুটা কম। তাছাড়া মিলাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই কেজিতে ২-১ টাকা দাম বেড়েছে। কারণ আমাদেরও বস্তাপ্রতি ৫০-১০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।’

বাজার নিয়ন্ত্রণে কেউ না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলেও মনে করছেন কোনো কোনো চাল ব্যবসায়ী।

এরই মধ্যে ভারত অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকার ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির সঙ্গে বাস ও রেল যোগাযোগও এখন বন্ধ। স্থলবন্দরগুলো সচল না হওয়ায় পণ্য আমদানিও অচল হয়ে পড়েছে। তবে বর্তমান মজুদের কারণে এখনই খাদ্য আমদানির কোনো প্রয়োজন দেখছেন না বিশ্লেষকরা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমাদের খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সরবরাহ সংকটে সাময়িকভাবে কিছুটা দাম বেড়েছিল। তবে এখন সরবরাহ চ্যানেল পুরোপুরি ঠিক হয়েছে। ফলে চালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও কমে আসবে।’