ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৬ জুন ২০২৪
  • অন্যান্য

বাজেট প্রতিক্রিয়া

সিগারেটের কর হার বৃদ্ধির উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাটা ও বিএনটিটিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ৬, ২০২৪ ৮:৫১ অপরাহ্ণ । ২০০ জন

এবারের বাজেট প্রস্তাবে সিগারেটের ওপর কর হার বৃদ্ধির প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)। বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন ২০২৪) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা একথা জানায়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দীর্ঘদিন পর ওপরের তিনটি স্তরের সিগারেটের করহার ১% বৃদ্ধি এবং নিম্ন স্তরের সিগারেটের করহার গত বছরের চেয়ে ২% বৃদ্ধিকে রাজস্ব আদায় এবং কোম্পানির মুনাফা হ্রাসের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে তামাক বিরোধি এই দুটি সংগঠন।

তাদের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় আরো বলা হয়েছে, কর হার বৃদ্ধি ইতিবাচক হলেও সামান্য মূল্য বৃদ্ধি তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর অবদান রাখবে না। বাজেটে নিম্ন স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি শলাকায় বৃদ্ধি মাত্র ৫০ পয়সা। এই বৃদ্ধি তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর অবদান রাখবে না। প্রতি শলাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধির সুযোগে তামাক কোম্পানি বাজারে প্রতি শলাকার মূল্য এক টাকা বাড়িয়ে দেবে যা তামাক কোম্পনির অযাচিত মুনাফা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে। বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব মেনে এই স্তরের সিগারেটের মূল্য ৬০ টাকা এবং কর হার ৬৩ শতাংশ করা হলে তা ধূমপান কমিয়ে আনা এবং রাজস্ব বৃদ্ধি উভয় ক্ষেত্রে সুম্পষ্ট অবদান রাখতো।

এছাড়া মধ্যম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য মাত্র ৩ টাকা (৪.৪৫%) বাড়িয়ে ৭০ টাকা এবং উচ্চ স্তরে ৭ টাকা (৬.১৯%) বাড়িয়ে ১২০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ গত অর্থবছরে তামাক কোম্পানিগুলো নিজেরাই উচ্চ স্তরের সিগারেটের দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করে বাজারজাত করেছে। অন্যদিকে অতিউচ্চ স্তরে ১০ শলাকার মূল্য ১০ টাকা (৬.৬৭%) বাড়িয়ে ১৬০ টাকা করা হয়েছে। এ স্তরেও গত অর্থবছরে তামাক কোম্পানি এটাকে ১৫৫ টাকা ধার্য করে সিগারেট বাজারজাত করেছে। এগুলো তারা বিক্রি করেছে আরও বেশি মূল্যে। সেই সাথে এক বছেরের মূল্যস্ফিতি ও মানুষের ক্রয় সামর্থ বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে এই মূল্য সিগারেটকে আরো সস্তা করে তুলবে। এই ন্যূনতম মূল্য বৃদ্ধি ধূমপান কমাতে অবদান রাখবে না। বরং বর্ধিত মূল্য থেকে তামাক কোম্পানির অংশ বৃদ্ধি এবং খুচরা শলাকায় মূল্য বৃদ্ধির ফাঁদে ফেলে তামাক কোম্পানি তার মুনাফা বাড়িয়ে নেবে যা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে ঘোষণা তার বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করবে বলেও মনে করে বাটা ও বিএনটিটিপি।

জর্দার প্রতি ১০ গ্রামের দাম ৪৫ টাকা থেকে মাত্র ৩ টাকা বাড়িয়ে ৪৮ টাকা এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের দাম ২৩ টাকা থেকে ২ টাকা বাড়িয়ে ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় ৫৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বিদ্যমান রয়েছে। এবং বিড়ির মূল্য ও করহারে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। এর ফলে জর্দা, গুল ও বিড়ির ব্যবহার বাড়বে যা একইসাথে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর মারাত্বক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাজেট প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনটিটিপির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারের বাজেটেও তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপে ত্রুটিপূর্ণ অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে। অ্যাডভেলোরেম পদ্ধতির পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করা হলে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর অবদান রাখতো। পাশাপশি তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ কমতো। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর যে মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে তামাক কোম্পানির মুনাফা বাড়বে। মূল্যস্ফীতি ও মানুষের ক্রয় সামর্থ বৃদ্ধি অনুযায়ী দাম বাড়ানোর সুযোগ ছিলো। যে মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে এখনই বাজারে এর চেয়ে বেশি মূল্যে সিগারেট বিক্রি হচ্ছে। ফলে এটি তামাকের ব্যবহার কমাতে অবদান রাখবে না যা দেশের জনস্বাস্থ্য পরিস্তিতির ওপর বরাবরের মতো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব অনুসারে ‘বাজেট প্রস্তাব’ সংশোধনের পরামর্শ দেন।