চলতি বছরের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় সিগারেটের দাম বাড়েনি। কাজেই ‘কার্যকরভাবে’ সিগারেটের দাম বাড়াতে হলে ১০ শতাংশের বেশি বাড়ানো দরকার। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বাড়ানো হয়েছে মাত্র ১১ শতাংশ। অর্থাৎ এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র ১ শতাংশ। ফলে সিগারেট আগের তুলনায় সহজলভ্য হবে। সিগারেট ব্যবহারকারী ও অকালমৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়বে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের কার্যকর করারোপবিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিমত দিয়েছেন তামাকবিরোধীরা। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে উন্নয়ন সমন্বয় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তৈয়েবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাজমুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড উইমেন স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি ও মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়িয়ে কার্যকর হারে করারোপের প্রস্তাবনা করেছিল নাগরিক সমাজ। বিশেষ জোর দেয়া হয়েছিল নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম বৃদ্ধির ওপর। সিগারেটের ১০ শলাকার একেকটি প্যাকেটের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়ে ৬০ টাকা করার প্রস্তাব ছিল নাগরিক সমাজের। কিন্তু বাজেটে দাম মাত্র ১১ শতাংশ বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। সিগারেটের ওপর সম্পূরক শুল্কের হার ৫৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৩ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকলেও বাজেটে এই হার করা হয়েছে ৬০ শতাংশ।
কার্যকর করারোপ না করার ফলে সিগারেটের ভোক্তা সংখ্যা আরো বাড়বে- এমন আশঙ্কা করে নাজমুল ইসলাম বলেন, চলতি বাজেটে যে হারে করারোপ করা হয়েছে তাতে দেশে ধূমপান কমবে মাত্র ৫ শতাংশ। সিগেরেট ছাড়তে পারে ৬ লাখ ধূমপায়ী, ৪ লাখ নতুন ধূমপায়ী ঠেকানো যেতে পারে। অকালমৃত্যু ঠেকানো যাবে মাত্র সাড়ে ৪ লাখ। কিন্তু নাগরিক সমাজের প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনা করা হলে ৯ লাখ ধূমপায়ীকে সিগারেট ছাড়ানো যেত, ৬ লাখ নতুন ধূমপায়ী ঠেকানো যেত। ৫ লাখের বেশি অকালমৃত্যু ঠেকানো যেত। প্রস্তাবিত বাজেট চূড়ান্ত হওয়ার আগে নাগরিক সমাজের প্রস্তাবনাগুলো পুনরায় বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে তৈয়েবুর রহমান বলেন, চলতি বছরের বাজেটে প্রতিফলিত করার সুযোগ এখনো আছে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও বাড়তি রাজস্ব আদায়ের সুযোগ সৃষ্টি করা জন্য সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো উচিত।