বিদেশী কয়েকটি কোম্পানি সুকৌশলে তরুণ সমাজকে আসক্ত করে নিজেদের দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা তৈরীর লক্ষ্যেই ভেপিং/ই-সিগারেটকে প্রসারের পায়তারা চালাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এই পণ্যকে ক্ষতিকর এবং আসক্তিকর পণ্য হিসাবে চিহ্নিত করে মোড়কে সতর্কীকরণ বার্তা যুক্ত করলেও বাংলাদেশে এই পণ্যকে কম ক্ষতিকর এবং ধূমপান ত্যাগে সহায়ক হিসেবে মিথ্যাচার ও চটকদার প্রচারণা চালাচ্ছে সিগারেট কোম্পানিগুলো। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের মাধ্যমেও ভেপিং/ই-সিগারেটের পক্ষে কথা বলাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ই-সিগারেট/ভেপিং ধূমপান ত্যাগে সহায়ক নয় বরং অধিক ক্ষতিকর পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছে। সিগারেট কোম্পানিগুলোর এহেন আগ্রাসী প্রচারণা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যকে নস্যাৎ করার হীন প্রচেষ্টা। বাংলাদেশে বর্তমানে এই ক্ষতিকর ই-সিগারেট এবং ভেপিং এর ব্যবহার খুবই নগন্য।
৩০ নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটভুক্ত সদস্য সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে মহামারী আকার ধারণ করার পূর্বেই বাংলাদেশে ই-সিগারেট উৎপাদন, বিপণন, আমদানি ও প্রচার নিষিদ্ধের দাবি জানানো হয়।
জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ভেপিং/ ই-সিগারেটকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেছে। অথচ কিছু ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহায়তায় কোম্পানিগুলো গোপনভাবে তরুণদের নিয়ে ভেপিং মেলা আয়োজন করছে। সিগারেট কোম্পানিগুলো নাটক সিনেমার বিভিন্ন জনপ্রিয় অভিনেতা/অভিনেত্রীদের দিয়ে ভেপিং/ই-সিগারেট সেবন দেখাচ্ছে। এছাড়া, গবেষণায় দেখা যায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি কোম্পানি একাধিক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা নিউমার্কেট, গুলশানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ভেপিং এবং ই-সিগারেট সেবনে তরুণদের উৎসাহী করতে ৩০ টিরও বেশি চেইন শপ চালু করেছে। এছাড়া, কোম্পানিগুলো রাজধানী ছাড়িয়ে এখন মফস্বল এলাকার তরুণদের হাতেও পৌঁছে দিচ্ছে এই মরণ নেশা।
সাধারণ সিগারেটের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট বাজারজাত করা হলেও এটি আসলে একটি নেশা সৃষ্টিকারী পণ্য। বিভিন্ন গবেষণা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে ই-সিগারেট বা ভেপিংয়ে নিকোটিনের পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকায় এই পণ্য ট্রেডিশনাল সিগারেটের থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই এ দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের ১০৯টি দেশ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ একং নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এসকল রাষ্ট্রের মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত, নেপাল অন্যতম। সম্প্রতি ই-সিগারেটের ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে অষ্ট্রেলিয়া সরকার ভেপিং/সিগারেট আমদানী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
বিগত বছরগুলোতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে দেশে তামাকের ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে এবং তামাক কোম্পানির ব্যবসা অনেক ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এমতাবস্থায় তামাকের বিকল্প হিসেবে ই-সিগারেট উৎপাদনের অনুমতি দিলে তা হবে একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। উল্লেখ্য, মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ, দেশে নতুন কোন সিগারেট কোম্পানিকে অনুমোদন না দেয়া এবং সিগারেট ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনে সরকারী সকল সংস্থাকে ভেপিং/ই-সিগারেট অনুমোদন বা প্রসারে কোনভাবেই সহযোগিতা বা সমর্থন করা উচিৎ নয়। বিবৃতিতে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে আমদানী নীতিসহ সকল নীতিতে ভেপিং/ই-সিগারেট বা এর মতো আসক্তিকর নতুন কোনো দ্রব্য এবং এটি প্রস্তুতে ব্যবহার্য কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ, লিকুইড ইত্যাদি নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায়ও এটি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়।