প্রাক বাজেট সভায় দেশী বিদেশী সিগারেট ও বিড়ি উৎপাদনকারীদের সাথে বৈঠকে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য বা এমআরপি বাস্তবায়নের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রহমাতুল মুনীম। গত ৫ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত প্রাক বাজেট সভায় এমআরপি বাস্তবায়নে বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এনবিআর চেয়ারম্যানের বক্তব্য পাবলিকহেলথের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
সিগারেট এমন একটা, যে যেমন খুশি তেমন দামে বিক্রি করলো, যে যেমন খুশি তেমন দামে খাবে আর যেভাবে খুশি সেভাবে কোম্পানিগুলো সিগারেট উৎপন্ন করবে সেটা নয়। সেজন্যই এটা নিয়ন্ত্রিত পণ্য! এই নিয়ন্ত্রিত পণ্যের সবক্ষেত্রের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ থাকবে। সুতরাং যে দামে খুশি দোকানদার বিক্রি করবে, সেটা হতে দেওয়া যায় না। সেজন্য এটা আমরা এমআরপি সিস্টেম চালু করেছি, এটা বাস্তবায়নের জন্য আপনাদের (সিগারেট কোম্পানি) সহযোগিতা দরকার।
প্রাক বাজেট সভায় উপস্থিত বিএটিবি, জাপান টোব্যাকো বাংলাদেশ এবং দেশীয় সিগারেট উৎপাদক কোম্পানিরগুলোর প্রতিনিধিদের এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহাম্মদ রহমাতুল মুনীম বলেন, আপনারা আগে যে সিস্টেমে ছিলেন, আপনারা এমআরপি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না, কমিশন যেটা দিতেন তাতে খুচরা বিক্রেতা খুশি হত অথবা খুশি না হলে সে সেটা ভোক্তার কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে নিতো। ভোক্তাদেরও সেখানে মাথা ব্যাথা করতো না, কারণ তাদের উপায় নাই। বাড়তি টাকা আদায় করে নেয়ার সেই বিষয়টি এখন কিন্তু আমরা রাখতে চাই না। সেজন্য দরকার হবে আপনারা যারা সিগারেট উৎপাদন করেন আপনাদের সহযোগিতা।
সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করার প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনি যদি যথেষ্ট ভালো মার্জিন না দেন খুচরা বিক্রেতাদের বা বিক্রেতাদের ভালো মার্জনা না দেন তাহলে সে ব্যবসা করে টিকে থাকতে পারবে না। এবং তখন সে নানা রকম অবৈধ পন্থা অবলম্বন শুরু করবে। যেটা আমাদের ভোক্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সেজন্য আপনারা সেই জিনিসটির নিশ্চিত করবেন যারা উৎপাদনকারীরা। তারা যে মার্জিন দেয় তা যেন খুচরা বিক্রেতারা ভালো মার্জিন পায়। যাতে তারা আপনাদের প্রোডাক্টটা বিক্রি করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। তারা যেন ভোক্তাদের উপর বাড়তি বোঝাটা চাপিয়ে না দেয়, দেয়ার চেষ্টা যেন না করে। আমরা এমআরপি বাস্তবায়নের জন্য একটা পরিকল্পনা নিয়েছি, আমরা তা এক্সিকিউট করার প্রক্রিয়ায় যাব। এক্ষেত্রে শুধু এনবিআর বা ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তরই নয়, আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। এমআরপি আমরা নিশ্চিত করতে চাই সিগারেটের ক্ষেত্রে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো দীর্ঘদিন ধরে প্যাকেটে উল্লিখিত সর্বোচ্চ খুচরামূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে আসছে। এভাবে তারা বছরে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। এ গবেষণা এবং গবেষণাটি নিয়ে একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।