অস্তিত্ব সংকটে সিলেট বিভাগের চার জেলার ৩৭টি নদ-নদী। দখলের কারণে অনেক নদীর গতিপথও পাল্টে গেছে। এরমধ্যে সুরমা-কুশিয়ারাসহ প্রায় আটটি নদীর ৩ হাজার ৬০০ মিটার জায়গা বেদখল হয়ে গেছে। এমনকি, ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে বেশিরভাগ। তবে, সংকট সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগের কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সিলেট নগরীর ময়লা পানি ১১টি ছড়ার মাধ্যমে সুরমা নদীতে গিয়ে মিশছে। একদিকে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানি, অন্যদিকে নগরীর আবর্জনায় ভরে গেছে নদী। এরমধ্যেই চলছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের কাপড় ধোয়ার কাজ।
স্থানীয়রা জানান, সিলেট নগরীর যত হাসপাতাল আছে তার সব কাপড়, বেড এ নদীতে ধোয়া হয়। ওসমানী মেডিকেল থেকে শুরু করে সদর হাসপাতাল পর্যন্ত সবার কাপড় এখানেই ধোয়া হয়। তারা আরও জানান, এতো বড় বাজার কিন্তু কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। ফলে বাধ্য হয়ে রাস্তা ও নদীর পাশে ময়লা ফেলছে মানুষ।
পাকা, আধা-পাকা ও টিনশেডের স্থাপনা তৈরি করে সুরমা, কুশিয়ারা, গোয়াইন, মাকুন্দা, ধলাই, মরা ধলাই, তৈমুর নগর ও সূর্যখাল নদ-নদীর প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার তীর নদীখেকোদের দখলে। এছাড়া, বাসিয়া নদীর ২ কিলোমিটার আছে ২৮৬ জনের অবৈধ দখলে।
৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বাসিয়া নদী সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, বিশ্বনাথ এবং সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরবাসী আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও দখল-দূষণের কারণে এর সুফল ভোগ করতে পারছে না এলাকাবাসী।
বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল হক বলেন, ‘এখানকার মানুষ কৃষিকাজ, বিশেষ করে রবি শস্য চাষ থেকে মানুষ বঞ্চিত। এর একটি মাত্র কারণ দখল-দূষণে নদী ভরাট হয়ে যাওয়া।’
নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যমতে, বিভাগে নদ-নদী একশ ৬৮টি। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে মাত্র ৩৬টি। এসএ খতিয়ানে মিলে ২১৫টির হিসাব। দখলদারির কারণে অনেক নদী তার গতিপথ ও অস্তিত্ব হারিয়েছে। এগুলো নদনদীর অবৈধ দখলমুক্ত করে খনন করার ক্ষেত্রে সমন্বিত উদ্যোগের গ্রহণ করতে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বেলার বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার, ‘নদীকে নদীর মতো করে থাকতে দিতে হবে। বিশেষত নদীকে দখলমুক্ত রাখতে হবে। গতি পথে বাধা তৈরি করা যাবে না। এবং যেখানে খননের প্রয়োজন সেখানে খনন করতে হবে। এসব ঠিক করা না গেলে সংকটাপন্ন নদীকে রক্ষা করা যাবে না।’
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘আমাদের পার্টে যে কাজগুলো যেমন বাজেট সাপেক্ষে নদী-খাল খনন করা। খননকাজে গেলে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করি। সিলেটের নদনদী রক্ষা অন্যান্য দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, সিলেট বিভাগের ১৮টি নদী খনন ও দখলমুক্ত করতে এক হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ বছর মেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।