ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
  • অন্যান্য

হাসপাতাল বাড়িয়ে রোগী কমানো যাবে না : এনটিসিসি সমন্বয়কারী

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২১, ২০২৩ ৫:০৮ অপরাহ্ণ । ২৪৫ জন

“কর বাড়ালে সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কমে-এ বিষয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকার সুযোগ নেই। কারণ বিশ্বব্যাপী এটা একটা স্ট্যান্ডার্ড থিওরি, এটা অনেকটা ইউনিভার্সাল ট্রুথের মতো। তারপরও অনেক সময় আমাদের শুনতে হয় যে, ট্যাক্স বাড়ালেও তামাকের কনজাম্পশন কমবে না। এ কথাটা কার কথা? আপনারা যখন বলবেন এ-কথাটা, তখন সেটা তামাক কোম্পানির পক্ষে চলে যায়। এটাই হলো বাস্তবতা। কারণ অনেকেই হয়ত ‘তামাক কোম্পানির সানগ্লাস’ দিয়ে দেখে বলেই তারা এসব কথা বলেন। এটা আসলে ভুল ধারণা, যা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।” এমন মন্তব্য করেছেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল(এনটিসিসি)-এর সমন্বয়কারী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার।

গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর) ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) যৌথভাবে আয়োজিত এক জাতীয় সেমিনারের তিনি এসব কথা বলেন। ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কর নীতি’ শীর্ষক এ জাতীয় সেমিনারে বিশেষ অতিথীর বক্তব্যে এসব কথা তুলে ধরেন এনটিসিসির সমন্বয়কারী।

পাবলিকহেলথ২৪.কম এর পাঠকদের জন্য জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বকারীর হোসেন আলী খোন্দকাররে বক্তব্যের প্রথম পর্ব আজ তুলে ধরা হলো।

হাসপাতাল বাড়িয়ে রোগী কমানো যাবে না
সেমিনারে অংশ নেয়া সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের উত্থাপিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ এখানে আমার সহকর্মীর স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করার বিষয়ে কথা বলেছেন। স্বাস্থ্যসেবাখাতে যে পরিমাণে উন্নত হয়েছে, বিশেষত গত কয়েক বছরে,তা অকল্পনীয়। আমি একটা উদাহরণ দেব। আজ থেকে ১৫ বছর আগে হাসপাতালে গেলে আপনারা দেখেছেন, আমরাও দেখেছি যে ফ্লোরে শুয়ে থাকতো রোগীরা। হাসপাতালে সিট যথেষ্ট ছিল না। ওয়ার্ড এভেইলএবেল ছিল না, কেবিন এভেইলএবেল ছিল না। মানুষ ফ্লোরে,করিডোরে শুয়ে থাকতো। আপনারা এখন হাসপাতালে যান, দেখবেন এখনো করিডোরে রোগীরা শুয়ে আছে। এমনকী সিঁড়িতে রোগী শুয়ে থাকতে দেখেছি। এখনো সিট নাই। অথচ গেল কয়েক বছরে সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ সিট বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে এই যে উন্নয়ন হয়েছে, সেটা তো সত্য।

তাহলে এখন প্রশ্ন হলো,আপনি কি খালি হাসপাতাল বানাবেন,সিট বাড়াবেন,ডাক্তার-নার্স নিয়োগ করেই যাবেন? যদি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সিগারেটসহ তামাকাজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করলে, চিনিযুক্ত বিভিন্ন ধরনের সফট ড্রিংকসের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ না করা না হলে আগামী ২০ বছরেও হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমানো যাবে না।হাসপাতালে সিট সংখ্যা বাড়িয়েও কুলাতে পারবেন না।

রোগীর সংখ্যা কমাতে প্রতিরোধী প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে
তাহলে কী করতে হবে? আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন। তথ্য নিয়ে দেখেন, আমরা যা কিছু করছি তার সবই হলো কিউরিটিভ ট্রিটমেন্ট। মানুষ অসুস্থ হলে আমরা তাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ্ করছি। কিন্তু মানুষ যাতে অসুস্থ না হয় সেই কাজটা করছি না কেন? রোগে যাতে আক্রান্ত না হয়, সেই ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেই তো রোগীর সংখ্যা কমে আসবে । আমাদের তো রোগীর সংখ্যা কমানো দরকার। আমি কি চিকিৎসা করে রোগী কমাবো, নাকি অসুস্থ যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়ে রোগীর সংখ্যা কমাব? আমাদের এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আজ এখানে কর্মশালা হচ্ছে ট্যাক্স নিয়ে। তার অর্থ কি এই যে, টোব্যাকো কন্ট্রোলিং অথরিটিই শুধু এটা নিয়েই পড়ে আছে? বিষয়টা অমন নয়। ট্যাক্স ছাড়াও যত রকম নিয়ন্ত্রণকারী টুলস আছে, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হিসাবে এনটিসিসি সবগুলো টুলসই ব্যবহার করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গবেষণার মাধ্যমে স্বীকৃত যে, তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে টুলস হচ্ছে ট্যাক্স বাড়ানো। এর বাইরেও তামাক থেকে জনগণকে ফিরিয়ে আনার জন্য যতরকম টুলস আছে দেশে এবং বিদেশে, আমরা সবই প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি। সবগুলোই চেষ্টা করা হয়েছে।জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) প্রতিষ্ঠা হয়েছে ২০০৭ সালে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ঘোষণা দিয়েছেন , ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর এনটিসিসির কাজ অনেক ফ্লারিশ (বিস্তার লাভ) করেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন সংস্কার, বিধিবিধান প্রণয়নসহ অনেক কিছু করেছে, করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

পুনঃরায় চালু করতে হবে এনবিআরের টোব্যাকো সেল
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)এর টোব্যাকো সেল ছিল, সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। কেন? এনবিআরের একটা টোব্যাকো সেল ছিল। তো এটা তো সরকারের একটা অথরিটি,একটা অফিস। সেটা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল কেন? এটা খুবই দুঃখজনক। এটা চালু থাকলে অন্তত ট্যাক্স নিয়ে গবেষণাটা চালু থাকত। কীভাবে ট্যাক্স বাড়ালে টোব্যাকোর কনজাম্পশন কমতে পারে সেসব বিষয়ে কাজ করতে পারতো। এনিবারের টোব্যাকো সেলে ভালোভাবে কাজ হলে আমরা কিছু ফলাফল পেতাম।

আমি যেহেতু এনটিসিসিতে কাজ করি, সুতরাং আমাকে কিছু বিষয়ে জবাব দিতে হবে। অনেকেই বলেছেন যে অন্যান্য টুল নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা অন্যান্য টুল নিয়েও কাজ করছি। যত ধরনের টুল আছে সব ধরনের টুল নিয়েই কাজ করছি। ট্যাক্স হলো শেষেরটা। ট্যাক্স বাড়লে দাম বাড়ে,কনজাম্পশন কমে।

এনবিআরের কর্মকর্তা আছেন এখানে। আমি অনুরোধ করব যে এনবিআর-এর টোব্যাকো সেলটা চালু করা যায় কিনা সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে। তাহলে সেখানে অন্তত একটা গবেষণা হবে। তারা একটু কাজ করুক। একটু বোঝার চেষ্টা করুক যে, কীভাবে ট্যাক্স বাড়াতে হবে, কীভাবে কী করতে হবে। কিছু কাজ হলে তো তখন আমাদের নলেজ-বেসটা ডেভেলপ করে। সেটাও তো দরকার।
আমি কিছু তথ্য শেয়ার করি। ২০২২ সালে বাংলাদেশে শুধু বিএটিবি (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ)-র টার্নওভার ছিল ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। আর এটাকে তারা ২০২৩ সালের শেষে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাবে। এ বছর শেষ হলে হয়ত আমরা হিসাবটা পেয়ে যাব। আর এদের গ্রোথ বা প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৫.১৯ শতাংশ । আর সারা বিশ্বে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে পুরো টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রির গ্রোথ দাঁড়াবে ১,০৬৬ ট্রিলিয়ন ডলার। আমি কি বোঝাতে পেরেছি তামাকের ব্যবসার পরিমাণটা কত ?

তাহলে এ যে গ্রোথ,এটা তো এনোরমাস, বিপুল। এর কনজিউমার সব দেশেই আছে, কম-বেশি। সবচেয়ে বেশি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। কিন্তু আমাদের দেশে জাতিগতভাবে আইন আমরা কম মেনে চলি। শুধু টোব্যাকো সেক্টরে নয়। দেখুন, সবখানেই আইনভঙ্গ করা হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে,যে-কোনো সেক্টরে তাকান। তার মানে হলো আমরা যথাযথভাবে কড়াকড়ি করে আইনগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি না। ম্যানপাওয়ারও কম আছে, সচেতনতাও কম আছে।

দাম বাড়লে অবশ্যই ব্যবহার কমে
আমি একটা উদাহরণ দেই, পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ইদানিং বাড়তি দাম থেকে একটু কমেছে। কিন্তু যখন পেঁয়াজের দাম বাড়ে তখন আপনারা কি একই রকম কিনতেন? কেনা কমিয়েছিলেন না? আমি বাসায় একেবারে বন্ধ করে দিয়েছি। আমি বলেছি পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না খুব ভালো হয়। আমি পেঁয়াজ ছাড়াই খাব। আমি একেবারেই চড়া দামে পেঁয়াজ কিনি না। এখন তো দেখছি যে, দাম কমে গেছে কিন্তু ক্রেতা নাই। এটা হলো অভ্যাসের ব্যাপার। এটা হলো ইউনিভার্সাল ট্রুথ এটা আমরা ব্যবহার করতে চাই। এনবিআর যদি সহযোগিতা করে, তাহলে আমরা নিশ্চয়ই কিছু ফলাফল পাব।

আজকের আলোচনায় একজন নিম্নমানের ডিজেলের আমদানির কথা বলেছেন। আজ এটা নিয়ে কথা বললে আমাদের ফোকাসটা অন্য দিকে চলে যাবে। কারণ আমরা আজকে বসছি টোব্যাকো নিয়ে। পরিবেশ দূষণের আরো অনেক কিছু করার আছে, শব্দদূষণ আছে, বায়ুদূষণ আছে। এগুলো নিয়ে বিভিন্ন অথরিটি, বিশেষ করে পরিবেশ বিভাগ কাজ করে। ডিজেল নিয়ে একটা কথা বলি। জীবাশ্ম জ্বালানীর যত ধরন আছে, এর মধ্যে আমরা শুধু ডিজেল আমদানি করি, অন্য কিছু আমদানি হয় না। ইদানিং যে লো-কোয়ালিটির ডিজেল দিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে, এটা আসলে ঠিক লো-কোয়ালিটির নয়। ডিজেলের কিছু ভ্যারাইটি আছে। আমরা আনি মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এটার ফাইননেসটা একটু হাই। কিন্তু মাঝখানে রাশিয়া থেকে আনা হচ্ছিল, ওটার ফাইননেসটা কিছু কম। আমাদের পরিশোধনাগারের যন্ত্রপাতি ওটাকে হ্যান্ডেল করতে পারে না। এর জন্যে ওটা বন্ধ। আমরা একটা সুযোগ হারালাম কারণ আমরা রাশিয়া থেকে খুব কম দামে পেতে পারতাম। যে সুযোগটা ভারত নিয়েছে। এজন্যে বলা হচ্ছে আমাদের রিফাইনারিকে আধুনিকায়ন করতে হবে, যাতে ওইসব ডিজেল আমরা আমদানি করতে পারি। তাহলে আমরা কম দামে ডিজেল পাব। এগুলো অন্য ইস্যু। আমাদের আজকে সেদিকে যাওয়ার দরকার নাই।

ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণে গবেষণা দরকার
ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্য (এসএলটি) বিষয়ে আরও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আওতায় আনতে হবে। বিষয়টা যিনি বলেছেন, যথার্থ বলেছেন। কারণ স্মোকলেস টোব্যাকোর ব্যবহার অনেকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। স্মোক ট্যেবাকো অনেকটা কমেছে, এটা আমরা স্বীকার করব। এটা আমাদের পরিসংখ্যানেও আছে। কিন্তু স্মোকলেস টোব্যাকো নিয়ে আমাদের হাতে তেমন তথ্য-উপাত্ত নেই। জর্দা-গুল-সাদাপাতার ব্যবহার এখনও অনেক বেশি, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মহিলাদের মধ্যে। তাই এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এ নিয়ে আমাদের আরও গবেষণা দরকার।

তামাক চাষ কমাতে কৃষি মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে
একজন বলেছেন তামাক চাষসহ তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন কমানোর কথা। কিন্তু এই উৎপাদন কমানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের অ্যালোকেশন অব বিজনেজ বা কাজের দায়িত্ব সীমার মধ্যে পড়ে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে এই কৃষিপণ্য উৎপাদন বন্ধ করা বা কমানোর ক্ষমতা নাই। এটা কৃষি মন্ত্রণালয় করতে পারে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে আমরা যখন বসেছি, তখন ওরা বলেছিলেন যে তামাক চাষ কমিয়ে আনবেন। এর কোনো অগ্রগতি আছে কিনা আমি বলতে পারব না। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মহাদয়ের সাথে যখন আমরা বসেছি, তখন উনারা নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন যে, তামাক চাষ ও উৎপাদন কমাতে হবে। আশা করা যায় যে, ভবিষ্যতে কৃষি মন্ত্রণালয় যদি কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয় তাহলে এটা কমবে। ইদানিং কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেমন সার বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে প্রথম উদ্যোগটা নেওয়া হয়। তখন থেকে যারা তামাক উৎপাদন করে তাদের সার বরাদ্দ দেওয়া হয় না।

তামাক উৎপাদিত হলে সেটা কোথায় যাবে সেটা আমাদের মাথাব্যথা নয়। এখানে একটা বিষয় আছে। আফগানিস্তান নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন হয়, সেটা নিয়ে কিন্তু তেমন কোনো কথা নাই। কেন হয়নি? আফগানিস্তানে মৌলবাদ ক্ষমতায় এসেছে, এটা নিয়ে যত কথা হয়, তার তুলনায় আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন করে তা নিয়ে কিন্তু তত কথা হয় না। এখন যদিও সেখানে কিছুটা কমেছে। আফিম কারা কনজিউম করে সবচেয়ে বেশি? তার মানে কী? এর মানে হলো এখানে একটা বড় বাণিজ্য আছে, যার অংশীদার তারাও। এ কারণেই আফিম উৎপাদন নিয়ে তত কথা হয় না। এটা হলো সোজা হিসাব।

ওরা এমনভাবে ব্রেন ওয়াশ করেছে যে, নিজেদের ভালোটাও বুঝি না আমরা
ঠিক একইভাবে তামাক উৎপাদন কমে গেলে অনেক কথা হয়। কেন হয়? তামাক তো তাদের দেশে উৎপাদিত হয় না। তারা এগুলো ঠেলে দিয়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে। এখান থেকে উৎপাদন করে ওদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে। মরলে তোরা মর। বিষয়টা এরকম, যা আমাদের অনেকের মাথায় নাই।

এই প্যালেস্তাইনের কথাই ধরুন। ওখানে যে অত্যাচারের ঘটনা ঘটছে তার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই বলছেন যে ওসব দেশের পণ্য আমাদের বর্জন করা উচিত। বয়কট করার একটা ডাকও আসছিল। আমি তো মনে করি শতকরা একভাগ মুসলমানও বয়কট করেনি। সচেতন না হলে কীভাবে হবে? এখনো চোখের সামনে দেখছি যে ওদের পণ্য মানুষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমরা কোথায় সচেতন? আমরা তো নিজেদের ভালোটাই বুঝি না। এমনভাবে আমাদের ব্রেনটা ওয়াশ করে ছেড়ে দিছে যে আমরা নিজেদের ভালোটাও এখন বুঝি না।

তামাক কোম্পানির লেন্স দিয়ে অনেকেই কথা বলার চেষ্টা করেন
আমার এক সহকর্মী বলেছেন যে স্বাস্থ্যসেবাকে লিড দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা লিড নিয়েছে। কিন্তু আপনি তো আমাকে সব টাস্ক দেননি। যদি দিতেন তাহলে তো চেষ্টা করতাম। আমাকে তো সব কাজ দেননি। আমাকে যেটুক দিয়েছেন, তার মধ্যেই আমি চেষ্টা করছি। আমি এই আইনটা নিয়ে যতটুকু চেষ্টা করেছি, আইনটা নিয়ে বৈঠক করেছি, আইনটা যে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত যেতে পেরেছি, তখন আমাদের সহকর্মীদের কাছ থেকে আইন নিয়ে যত কথা শুনেছি, শুনে মনে হয়েছে তারা কারো এজেন্ডা নিয়ে কথা বলেছেন। তাহলে আপনি কীভাবে এগোবেন? এগোতে তো পারবেন না।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কতটুকু করতে পারে? স্বাস্থ্যসেবা আপনাকে সচেতন করতে পারবে, আপনি হাসপাতালে আসলে আপনাকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করার কাজটা করতে পারবে। এই যে কোভিডের দুই বছরে ৩০ হাজার ৩’শ ৪৫ জন লোক মারা গেছেন, তাদের শতকরা ৯৮ ভাগ হলো লাং (ফুসফুস) অকেজো হয়ে গিয়েছিল, তারা মারা গেছে। ওরা সিগারেট খেত,ধুমপায়ী ছিল, জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করতো। আমার একজন ঘনিষ্ঠ, বয়সে আমার চেয়ে সাত/আট বছরের ছোট, খুলনার মানুষ, ব্যবসায়ী। শুনলাম সে কোভিড পজেটিভ, হাসপাতালে গেছে, তিন-চার দিনের মাথায় সে মারা গেছে। সে শারীরিকভাবে বেশ ফিট ছিল, মোটরসাইকেল চালাত। কিন্তু সে চেইন স্মোকার ছিল। তার পরিবার চিন্তাই করতে পারেনি যে সে মারা যাবে।

তাহলে আমি তো আগেই নিজেকে ধ্বংস করে ফেলছি, এখন রোগ-শোক হলে তো পরিস্থিতি খারাপ হবেই। আর সারা বিশ্ব জুড়ে অসংক্রামক রোগের ৭০ ভাগ হলো এই নেশাজাতীয় জিনিসের জন্যে।

 

চলবে …