১৯৮৩-র ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই দিন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের গৌরবজ্জ্বল মুকুটে আর একটি রক্তপালক। সংযোজিত হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের স্ফুরন ঘটেছিল। সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দমন পীড়নের প্রথম লক্ষ্যবস্তু হিসাবে বেছে নেন।
সামরিক ফরমান জারী করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এবং হল সমূহের অভ্যন্তরেও কোনো সভা-সমাবেশ মিছিল করা যাবে না। এমনকি ৫ জনের বেশি একত্রিত হওয়া যাবে না। মিলাদ বা দোয়া মাহফিল করতে হলেও সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে স্থাপিত সামরিক ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে। একের পর এক এ ধরনের ফরমানে ছাত্র সমাজ অপমানিত বোধ করে এবং ছাত্র জাত্যাভিমানে আঘাত লাগে। এবং একতরফাভাবে শিক্ষাকে বিশেষতঃ উচ্চ শিক্ষাকে সংকোচন ও প্রাথমিক স্তর থেকেই শিশু মনে সাম্প্রদায়িক ভেদ-বিভেদ সৃষ্টির এক শিক্ষা নীতি ঘোষনা করার ফলে, ছাত্র আন্দোলনে ভাটার টান থাকলেও গনতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন সমূহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধের ডাক দিলে ছাত্র সমাজ দ্রুতই সাড়া দেয়। প্রতিরোধের আকাংখায় ছাত্র আন্দোলনে এক নব উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
তবে অগ্রসর হওয়ার পথ মসৃন ছিলো না। আকাবাকা নানা পথে, নানা কৌশলে ছাত্র আন্দোলনকে অগ্রসর করতে হয়েছিল এবং অবশেষে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘৮৩ তারিখে সামরিক আইনকে উপেক্ষা করে মজিদ খাঁনের শিক্ষানীতি বাতিল ও গনতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে ততকালীন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে নেতৃত্বে ছাত্র সমাজের এক বিশাল মিছিল স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয়েছিল সচিবালয়ের পথে। ভীত শাসকেরা সেই মিছিলের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ সংগঠিত করে। শহীদের মৃত্যু বরন করেন জয়নাল এবং পরবর্তীতে মোজাম্মেল ও কাঞ্চন।
১৪ ফেব্রুয়ারির রক্তপতাকা হাতেই ছাত্র সমাজ ঝাপিয়ে পড়েছিল ৯০-এর গনঅভুত্থানে। এরশাদের সামরিক শাসন জারির বছর না পেরোতেই মধ্য ফেব্রুয়ারির ছাত্র বিদ্রোহ এটাই প্রমান করে যে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার একটা অন্তর্নিহিত তাগিদ বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের মাঝে সব সময়ই বিরাজমান। স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামের যে পথে সেদিন যে যাত্রা শুরু হয়েছিল সে পথ আজও ফুরায় নি। সে যাত্রাপথের ঘন আঁধারে ১৪ ফেব্রুয়ারি যেন ধ্রুবতারার মত। ঠিক যেন ঋত্বিক ঘটকের মেঘে ঢাকা তারার মত জ্বল জ্বল করছে।