ঢাকাসোমবার , ২৮ আগস্ট ২০২৩

৪০০০ বছর আগের শহরে ছিল সিরামিক পাইপের মাধ্যমে বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা

সানজিদা সুমাইয়া
আগস্ট ২৮, ২০২৩ ৮:০০ পূর্বাহ্ণ । ৩২৮ জন

সাধারণত চীনের লংশান যুগ (২৬০০-২০০০ খ্রিষ্টপূর্ব) আধুনিক মৃৎশিল্পের জন্য পরিচিত। কিন্তু নতুন এক আবিষ্কারের কারণে তা আবার আলোচিত হয়ে উঠেছে। একদল প্রত্নতত্তবিদ চীনের ঝউকো সিটিতে মানুষের তৈরি সবচেয়ে পুরাতন সিরামিক পাইপ নেটওর্য়াক আবিষ্কার করেছেন, যা ব্যবহার করা হত শহরটির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা হিসেবে। কেন্দ্রীয় শাসন ব্যাবস্থা না থাকা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের অভাবনীয় প্রকৌশল দক্ষতার নিদর্শন হয়ে রয়েছে সিরামিক পাইপগুলো। লংশান যুগের প্রাচীর ঘেরা শহর পিংলিয়াংতাই-এ পাওয়া গেছে এই অভিনব সিরামিকের পাইপ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের অন্যন্য ব্যবস্থা। যা বর্তমানে কেন্দ্রীয় চীনের ঝউকো সিটির হুয়াইয়াং জেলায় অবস্থিত।

নিওলিথিক সময়ে এই শহর উঁচু প্রাচীর ও পরিখা ঘেরা ছিল এবং প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ এখানে বসবাস করত। ভৌগলিক অবস্থানও ৪০০০ বছর আগে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবে এই এলাকায় প্রতিবছর বর্ষাকালে ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হত। পিংলিয়াংতাই-এর মানুষ অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের পানি শহর থেকে বের করে দিতে দুই স্তরের নিষ্কাশন ব্যবস্থা বানিয়েছিল। আবাসিক এলাকার বাড়ি থেকে সরল কিন্তু সমন্বিত সিরামিকের তৈরি ড্রেনেজ লাইন দিয়ে বৃষ্টির পানি নিয়ে যাওয়া হতো শহরে সীমানায় খননকৃত পরিখায়।

প্রত্নতাত্ত্বিক দলটি বলছে, প্রাচীন সমাজটি একত্রিত হয়ে ড্রেনেজ সিস্টেমটি তৈরি ও দেখ ভাল করতো। “এই সিরামিক পাইপ নেটওয়ার্কের আবিষ্কারটি উল্লেখযোগ্য কারণ পিংলিয়াংতাই এর লোকেরা প্রস্তরযুগের সরঞ্জামগুলির সাহায্যে এবং কেন্দ্রীয় শক্তি কাঠামোর সংগঠন ছাড়াই এই উন্নত জল ব্যবস্থাপনা তৈরি এবং বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিল।” ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রত্নতত্ত্ববিদ গবেষণার সহ-লেখক ইয়জি ঝুয়াং বলেন। “এই সিস্টেম তৈরিতে উল্লেখযোগ্য মাত্রার সামাজিক পরিকল্পনা ও সমন্বয় দরকার হয়েছিল যা সে সময়ের মানুষেরা অর্জন করেছিল।”

নেটওয়ার্কটি আন্তঃসংযোগকারী পৃথক অংশ দিয়ে তৈরি যেটি রাস্তা এবং দেয়াল বরাবর চলে এবং বৃষ্টির পানিকে সরিয়ে দেয়। গবেষকদের মতে, এটি উন্নত কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার নিদর্শন ও এখন পর্যন্ত চীনে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম সম্পূর্ণ সিস্টেম। বিষয়টি আরো চমকপ্রদ কারণ পিংলিয়াংতাই-এর অন্যান্য স্থাপনায় সামাজিক শ্রেণি বিন্যাসের আর কোন চিহ্ন পাওয়া যায় নি। সবগুলো বাড়ি একই আকারের এবং সামাজিক বিনোদন বা বৈষম্যের কোন নিদর্শন নেই। এমনকি কবর স্থানেও লাশ দাফন বিষয়ক কোন বৈষম্য চোখে পড়ে না যেমনটা আশেপাশের শহরগুলোতে দেখা যায়।”

পাইপগুলোর স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী আগের কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক ধারনাকে ভেঙে দেয়। আগে মনে করা হত যে শধু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষেই এমন জটিল পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা নির্মাণ করা সম্ভব। অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতায় উন্নত পানি নিষ্কাশনের পেছনে একটি শক্তিশালী ও কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু পিংলিয়াংতাই থেকে বোঝা যায় যে কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় গুরুত্বপূর্ণ নয়।

“পিংলিয়াংতাই একটি অসাধারণ স্থান। পানির পাইপের নেটওয়ার্কটি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং হাইড্রোলজির একটি উন্নত বোঝাপড়া দেখায় যা পূর্বে শুধুমাত্র আরও শ্রেণীবদ্ধ সমাজে সম্ভব ছিল বলে মনে করা হত। গবেষণার সহ-লেখক ওপেকিং ইউনির্ভাসিটির প্রত্নতত্ত্ববিদ হাইঝাং বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।

লংশান মৃৎশিল্পের মত নকশায় কিছু পার্থক্য থাকলেও প্রতিটি পাইপ ব্যাস ৭.৮ এবং ১১.৮ ইঞ্চি আর দৈর্ঘ্য ১১.৮ এবং প্রস্থ ১৫.৭ ইঞ্চি। অনেকগুলো খণ্ডক জোড়া দিয়ে লম্বা পাইপগুলো বানান হয়েছে।

কীভাবে এই মহৎ কাজটি সম্পন্ন হয়েছে বা সমবন্টন কীভাবে হয়েছে তা নিয়ে গবেষক দল এখনো কাজ করছে। পিংলিয়াংতাই-এর চারপাশে প্রাচীর ও পরিখা খনন করতেও একই রকম সামাজিক প্রচেষ্টা দরকার হয়েছিল।

অনুবাদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী