রাজধানী ঢাকার হোটেল শেরাটনে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অংশগ্রহণে ‘আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩’। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি।
আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলনে উদ্ভোধনী বক্তব্য প্রদান করেন- প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত ও ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। এর আগে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন- ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের আহবায়ক নাহিম রাজ্জাক এমপি।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ এর উপদেষ্টা পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ ও ক্লাইমেট পার্লামেন্ট ইন্ডিয়া’র চেয়ারম্যান এবং ক্লাইমেট স্টিমেটস কমিটির চেয়ারপারসন ড. সঞ্জয় জৈশাল এমপি ও ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারপারসন তানভির শাকিল জয় এমপি।
এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে- স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি বলেন, “এই শীর্ষ সম্মেলন নীতিনির্ধারক, কূটনীতিক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, যুব এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের স্থিতিস্থাপক দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি তাদের চিন্তাভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার কথা বলেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং মানবতার জন্য একটি রেড কোড হিসেবে গবেষণা করা হয়েছে তাই এক বিশ্ব ধারণা মডেলের অধীনে এই উল্লেখযোগ্য সংকটকে একত্রিত করার এবং কাজ করার সময় এসেছে৷ এই সামিট তারই একটি সমন্বয়ের কথা বলে। যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নীতিনির্ধারকগণ একত্রিত হয়েছেন।
আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি বলেন, “নেতৃত্ব প্রখর হতে হবে এবং মাননীয় স্পিকার নেতৃত্বের ভূমিকায় নেতৃত্ব দেওয়ার এবং আমাদেরকে উৎসাহিত করার দায়িত্ব নিয়েছেন। উদাহরণ স্বরূপ বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যা একটি গ্রহগত জরুরী পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ নেয়। একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ মনোভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড.কাজী খলিকুজজামান আহমদ বলেন, আমাদের-নিজেদেরকেই এই মন্তব্য মনে করে দিতে হবে যে, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে৷ আমরা শীর্ষে যাওয়ার কথা বলছি কিন্তু তা হয়নি, আমরা কথা বলছি না এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে। জুলাই ২০২৩ এর রেকর্ডে সবচেয়ে উষ্ণ মাস এবং ইউরোপে এর অবস্থা ও একইরকম ৷ “বৈশ্বিক ফুটন্তের যুগ এসে গেছে”, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করার পর জুলাই মাসটি রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ মাস হওয়ার পথে রয়েছে।
তানভীর শাকিল জয় এমপি বলেন, আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের চাপের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যৌথ অঙ্গীকারের জন্য এখানে সম্মিলিত হয়েছি। আমাদের শীর্ষ সম্মেলনটি চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গঠন করা হয়েছে। পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন, পানি এবং বর্জ্য, শক্তির ভবিষ্যত ও আঞ্চলিক সহযোগিতা তরান্বিত হবে এই সম্মেলনের মাধ্যমে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. সঞ্জয় জৈওশাল এমপি বলেন- এটি খুবই সৌভাগ্যের বিষয় ভারতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের সময়ে আমরা এই ইভেন্টটি করছি। আমি বিশ্বাস করি যে বিশ্ব নেতাদের একত্রিত করা গুরুত্বপূর্ণ এবং সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক সংলাপকে উৎসাহিত করছি যা বিশ্বদরবারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভালো উদ্যোগ ও ভবিষ্যতের সমস্যায় নিজেরা একসাথে আলোচনা ও সহযোগিতার মনোভাব রাখতে পারবো-এই ধারণা জন্মায়।
এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্যে নাহিম রাজ্জাক এমপি বলেন, আজ আমরা গর্বের সাথে বলতে পারি, এই আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩ এর অংশীদার, স্টেকহোল্ডার বিশেষজ্ঞ আমাদের আঞ্চলিক অংশীদার, বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কীভাবে আমরা ঐকমত্য তৈরি করতে পারি তা মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি। জলবায়ু পরিবর্তনের আজ আমাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রজন্মকে বাঁচাতে দরকার সমন্বিত উদ্যোগ।
তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, শীর্ষ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকগণ, কর্পোরেট সেক্টর, উন্নয়ন সহযোগী দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক সংস্থা সহ বিভিন্ন সেক্টরের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনে ৪ টি থিমেটিক সেগমেন্ট ও ১৯ টি সেশনে আলোচক (প্যানেলিস্ট) হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন ১২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
এছাড়াও দেশ ও দেশের বাইরের প্রায় ৬০০ জন প্রতিনিধি সরাসরি এই সম্মেলনে অংশ নিবেন বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত গণমাধ্যমকে জানান।
ক্লাইমেট পার্লামেন্ট বাংলাদেশ, দ্য আর্থ সোসাইটি, অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) ও ক্লাইমেট পার্লামেন্ট এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘আঞ্চলিক জলবায়ু সম্মেলন ২০২৩’।
এই আয়োজনের সাথে সরাসরি সংশ্লিষ্ঠ আছেন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, জাতীয় ও আন্তজার্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা মিলিয়ে মোট ২২টি প্রতিষ্ঠান।
সম্মেলনের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে থাকছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও ইউএনডিপি বাংলাদেশ।