রাজধানীর ধানমন্ডি ৬ নম্বরে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চালু হলো ক্যানসার প্রতিরোধ (প্রিভেন্টিভ অনকোলজি) বিভাগ। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র চ্যারিটেবল ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসার সভাপতিত্বে এই বিভাগের উদ্বোধন করা হয়।
এসময় তিনি ৩ ধাপে পূর্ণাঙ্গ ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে তোলার পরিকল্পনা তুলে ধরেন। প্রথম ধাপে নগর হাসপাতালে ক্যানসার চিকিৎসার বিদ্যমান সুবিধা (৭ম তলায় ব্র্যাকিথেরাপি ও কেমোথেরাপির ডে-কেয়ার সেন্টার, বিদ্যমান জনবল) আত্তীকরণ করে, এর সঙ্গে ৬ষ্ঠ তলায় ক্যানসার ওপিডি ও ক্যানসার প্রতিরোধ বিভাগ যুক্ত করে হাসপাতালের ইউনিট-১ গড়ে উঠবে একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে। ভর্তি রোগীর চিকিৎসা হবে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের আওতায়। ২০২৪ সালের মধ্যে এ ইউনিট ও নগর হাসপাতালের সমন্বয়ে বিকিরণ চিকিৎসার টেলিথেরাপি (লিনিয়ার এক্সিলারেটর) ছাড়া ক্যানসারের সব সেবা চালু হবে।
ইউনিট -২ চালু হবে মিরপুর পল্লবীতে নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনের ৪/৫ টি ফ্লোর নিয়ে। ২০২৪ সালের মধ্যে এখানে ওপিডি, ক্যানসার স্ক্রিনিং ও দূর-দূরান্তের ক্যানসার রোগীদের স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ গণস্বাস্থ্য ক্যানসার নিবাস চালু হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে ইনডোর, ডে-কেয়ার ও ওটি চালু হবে।
তৃতীয় ও শেষ ধাপে ২০২৭ সালের মধ্যে সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অধিগ্রহণকৃত স্থানে ৪৫টি রেডিওথেরাপি মেশিন, ওটি কমপ্লেক্স, কেমোথেরাপির জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ পূর্ণাঙ্গ ও সমন্বিত ক্যানসার হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে।
ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, গণস্বাস্থ্যের সকস্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে টেলিমেডিসিননির্ভর সমাজভিত্তিক প্রাথমিক ক্যানসার সেবা চালু করা হবে। জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশলপত্র, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি প্রণয়নের বিষয়ে এডভোকেসি ও জনমত গঠনের জন্য কাজ করবে এ বিভাগ।
দেশের কোথাও প্রিভেন্টিভ অনকোলজি বিভাগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অথচ সারা বিশ্বে এই বিভাগ ছাড়া কোনো স্বীকৃত ক্যানসার সেন্টার কল্পনা করা যায় না। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র জন্মলগ্ন থেকেই রোগ প্রতিরোধের প্রতি অধিকতর জোর দিয়ে এসেছে।
ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন বলেন, এখানে কোর বায়োপসি, প্যাপটেস্ট ও এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট করা যাবে। সর্বনিম্ন ধাপে মাত্র দুই হাজার টাকায় স্যাম্পল কালেকশনসহ এইচপিভি ডিএনএ টেস্ট করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা।
এছাড়া গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের সহযোগিতায় ক্যানসার সার্জারির সাশ্রয়ী প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। এরই মধ্যে সার্জিকেল অনকোলজিস্ট ডা. মো. হাসানুজ্জামান অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, বারডেমের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, নারীস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি ড. হালিদা হানুম আখতার, নারী অধিকার নেত্রী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি শিরীন হক, বিএসএমএমইউ’র গাইনি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক লতিফা শামসুদ্দিন, বিএসএমএমইউ’র ইউরো-অনকোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ সালাম, বিএসএমএমইউ’র প্যালিয়েটিভ কেয়ার বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেজাম উদ্দিন, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আফতাব উদ্দিন, ডা. আবু জামিল ফয়সাল, ডা. মো. শহিদুল্লাহ, নিপসমের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আব্দুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব আব্দুল হাকিম মজুমদার, হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড- এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আতাউর রহমান মিটন, নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন কর্মী শওকত মাহমুদ, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক মসিহ্উদ্দিন শাকের, নারী উদ্যোগ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মাশহুদা খাতুন শেফালী। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক বদরুল হক, ডা. ফারজানা আক্তার ও ডা. নিজামুল হক।