ঢাকারবিবার , ২৮ জুলাই ২০২৪
  • অন্যান্য

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে আম

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ২৮, ২০২৪ ২:৪৫ অপরাহ্ণ । ২৪ জন

কারফিউ জারির কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যানবাহন চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিথিল থাকলেও মূলত আম পরিবহন করা হয় রাতে। ওই সময়টায় কারফিউ থাকায় চালকরা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে চান না। গত ১০ দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে আম সরবরাহ করতে পারেননি অনেকে। ব্যবসায়ী ও আমচাষীদের দাবি, প্রচুর আম পেকে নষ্ট হচ্ছে বাগানে। ক্ষতি এড়াতে গাছ থেকে আম পাড়লেও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে চাষী ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা।

সদর উপজেলার যৌবনকোবন এলাকার আমচাষী আসাদুল আল মাহমুদ বিপ্লব জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সারা দেশেই এখন নাবি জাতের আম জনপ্রিয়। মৌসুমের শেষ দিকে যে আমগুলো বাজারে আসে সেগুলো বেশি দামে বিক্রি হয়। নাবি জাতের আম যখন বাজারে আসা শুরু হয়েছে, তখনই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কারফিউ জারি করে। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আমের দাম ঊর্ধ্বমুখী ছিল। চাষী ও ব্যবসায়ীরাও লাভের মুখ দেখছিলেন।’

রাজশাহীর চারঘাট এলাকার আম ব্যবসায়ী সুবোধ কুমার চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৪২ লাখ টাকায় আমবাগান কিনেছিলেন। ওই বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ৩১ লাখ টাকা। অবশিষ্ট আম থেকে আর ১ লাখ টাকা আয় হতে পারে বলে ধারণা তার। সব মিলিয়ে তার ক্ষতির পরিমাণ ১০ লাখ টাকার মতো।

সুবোধ কুমার বলেন, ‘লাভের আশায় এত দূর থেকে এসেছি ব্যবসা করতে। কিন্তু লাভ তো দূরের কথা, এতগুলো টাকা লোকসান দিয়ে গেলাম। আন্দোলন না হলে এ লোকসান হতো না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, জেলা থেকে প্রতিদিন তিন শতাধিক ট্রাকে সাড়ে ৩ হাজার টন আম যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। যার বাজার দাম প্রায় ২৫ কোটি টাকা। আন্দোলনের ১০ দিনে ২৫০ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছু আম পচে নষ্ট হওয়ায় এবং কিছু কম দামে বিক্রি করায় অংক গিয়ে দাঁড়ায় ১৫০ কোটি টাকার ঘরে। কাজেই ওই ১০ দিনে চাষী ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, ‘আমরা ভরা মৌসুমে আম বিক্রি করতে পারিনি। অনেক চাষীর কাছে শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেয়ার মতো নগদ টাকা ছিল না। শ্রমিকদের পারিশ্রমিক হিসেবে আম দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনো হয়নি।’

আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে না পারলেও কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর বাগানে প্রায় তিন লাখ টন আম উৎপাদন হয়েছে। এখনো গাছে রয়েছে ৪০ শতাংশ আম। আন্দোলন ও কারফিউর কারণে আম নিয়ে চাষী ও ব্যবসায়ীরা বিপাকে রয়েছেন বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার।

তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারটি জনপ্রিয় নাবি জাত রয়েছে। এ জাতগুলোর ওপর নির্ভর করেই ব্যবসা করেন চাষী ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সম্প্রতি যে সমস্যা হয়েছিল সে কারণে সব জায়গায় আমের চাহিদা কমে যায়। ওই সময় যে আম পেড়েছিলেন চাষীরা তা কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারেননি। এজন্য তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।’