বিশ্বব্যাপি স্ট্রোকে আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবেই স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ রোগী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছে বা ঝুঁকিতে রয়েছে এবং প্রতি হাজারে গড়ে ৩ থেকে ৫ জন রোগী স্ট্রোকের শিকার হচ্ছে। এছাড়া, নন কমিউনিকেবল ডিজিজ হিসেবে স্ট্রোক এখন দ্বিতীয় মৃত্যুর কারণ হিসেবে গণ্য হয় এবং যারা জীবিত থাকেন তারাও নানান শারীরিক প্রতিবন্ধিতায় ভুগেন বা ঝুঁকিতে থাকেন। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রক্তনালীগুলোর মধ্যে রক্ত সঞ্চালন কমে গেলে বা রক্তনালীতে চর্বি জমা হলে (মূলত থ্রম্বো এম্বোলিজমের কারণে হয়ে থাকে) তা ইস্কেমিক স্ট্রোক হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরীণ রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে রক্তক্ষরণ হলে ও আক্রান্ত স্থানের টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করলে তাকে হেমোরেজিক স্ট্রোক বলা হয়। এটি রোগীর বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
স্ট্রোকের প্রধান কারণ
♦ উচ্চ রক্তচাপ
♦ রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকা
♦ ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে বা হৃদরোগ থাকলে
♦ কখনো কখনো অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন)
♦ মানসিক চাপ
♦ অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি
♦ অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস
♦ ধূমপান, তামাক-জর্দা বা অন্যান্য মাদক সেবন, মদপান
করণীয়
♦ স্ট্রোকের পর যদি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয় তাহলে মৃত্যুমুখ থেকে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। রোগী যত দ্রুত চিকিৎসা পাবে, ক্ষতির আশঙ্কা ততই কমবে।
♦ রোগীকে বাতাস করতে হবে অথবা আলো-বাতাস চলাচল করে এমন স্থানে রাখতে হবে।
♦ গায়ে থাকা কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে, যেমন টাই, বেল্ট, স্কার্ফ, অন্তর্বাসের বাঁধন খুলে দিতে হবে, যেন রোগী শ্বাস নিতে পারে।
♦ রোগী জ্ঞান হারালে মুখ খুলে দেখতে হবে কিছু আটকে আছে কি না। ভেজা কাপড় দিয়ে মুখে জমে থাকা লালা, খাবারের অংশ বা বমি পরিষ্কার করে দিতে হবে।
♦ এ সময় রোগীকে পানি, খাবার বা কোনো ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।
কারণ একেক ধরনের স্ট্রোকের ওষুধ একেক রকম। প্রথম তিন ঘণ্টা খুব জরুরি। স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর থেকে তিন থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় খুবই ক্রিটিক্যাল। এই সময়ের মধ্যে বা তার আগে রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হলে মৃত্যুঝুঁকি অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব।
চিকিৎসা
♦ সাধারণত স্ট্রোকের রোগীকে সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা আইভি থ্রোম্বোলিসিস চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ইনজেকশনের মাধ্যমে এমন একটা ওষুধ দেওয়া হয়, যা রক্তনালির ব্লক অপসারণ করে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে।
♦ রোগীকে লক্ষণ দেখা দেওয়ার আট থেকে ১৬ ঘণ্টার মধ্যে আনা হলে সাধারণত মেকানিক্যাল থ্রোম্বোকটমি চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এই প্রক্রিয়ায় একটি বিশেষ যন্ত্র বা ক্যাথেটার দিয়ে রোগীর রক্তনালিতে জমাট বাঁধা রক্ত অপসারণ করে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।
♦ রক্তপাত মারাত্মক হলে মাথার হাড় কেটে মস্তিষ্কের ক্ষতিগ্রস্ত অংশটিকে চাপমুক্ত রাখা হয়।
যেন মস্তিষ্কের সুস্থ অংশ আক্রান্ত হতে না পারে, একে বলা হয় ডিকম্প্রেস ক্র্যানিয়্যাকটমি।