ঢাকামঙ্গলবার , ২০ আগস্ট ২০২৪

‌ পোলট্রি বাজার থেকে ৫,২৯০ কোটি টাকা অতিরিক্ত তুলে নিয়েছে সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ২০, ২০২৪ ১:২৭ অপরাহ্ণ । ৩৪ জন

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে বছরে অতিরিক্ত ৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির ভাষ্য, এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা, অনেকেই খামার বন্ধ করে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে একচেটিয়াভাবে ডিম ও মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিপিএর পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ করা হয়।

সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি আনার চেষ্টা করেছি। সবসময় করপোরেট গ্রুপের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। প্রতিবেশী দেশ ভারতে এক কেজি ফিডের দাম ৪০-৫০ টাকা, একটি মুরগির বাচ্চার দাম ২৫-৩৫ টাকা। সেখানে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ৫ টাকা। আর এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ৭৬-৮৬ টাকা। কিন্তু আমাদের দেশে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ প্রতিবেশী দেশের তুলনায় দ্বিগুণ।’

তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে এক কেজি ফিডের দাম ৬০-৭২ টাকা, একটি মুরগির বাচ্চার দাম ৬০-১০০ টাকা, প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ দশমিক ২৯ টাকা, এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৫৫-১৭০ টাকা, আর এক কেজি সোনালি মুরগির উৎপাদন খরচ ২৪০-২৬০ টাকা। ফলে বর্তমান বাজারে উৎপাদন খরচের বিপরীতে প্রতি কেজি মুরগিতে ৪০-৬০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বিপিএ সভাপতি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশে বছরে ফিডের চাহিদা ১ কোটি ২০ লাখ টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৮০-৮৭ লাখ টন। আমরা যদি প্রতি কেজিতে সর্বনিম্ন ৫ টাকা বেশি ধরে হিসাব করি তাহলে প্রতি টনে ৫ হাজার টাকা হয়। আর ৮০ লাখ টনে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে ফিড সিন্ডিকেট। আর এর খেসারত দিচ্ছেন ভোক্তা ও প্রান্তিক খামারিরা।’

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ২০২২-২৪ সাল পর্যন্ত দফায় দফায় ফিড তৈরির উপাদানের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে কোনো কারণ ছাড়াই তা বেড়েছে। এ সময় প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে টিকিয়ে রাখতে ও ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে ডিম ও মাংস সরবরাহের জন্য সাত দফা দাবি তুলে ধরে বিপিএ। যার মধ্যে রয়েছে পোলট্রি ব্যবসায়ী ও খামারিকে বাংলাদেশের সব ব্যাংক থেকে বিনা জামানতে ঋণ সুবিধা দিতে হবে। একদিন বয়সের সব মুরগির বাচ্চার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩০-৫০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে। সব ধরনের পোলট্রি ফিডের ৫০ কেজি বস্তার মূল্য ২৫০০-৩০০০ টাকার মধ্যে রাখতে হবে। করপেরেট গ্রুপকে কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, ডিম ও মুরগির বাণিজ্যিক উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সব পোলট্রি ব্যবসায়ী ও খামারিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আইডি কার্ড (পরিচয়পত্র) দিতে হবে। সরকারিভাবে বাণিজ্যিক ফিড মিল ও বাচ্চা উৎপাদনের জন্য হ্যাচারি চালু করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিপিএর সহসভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকারসহ খামারি ও ব্যবসায়ীরা।