ঢাকাশুক্রবার , ২৩ আগস্ট ২০২৪
  • অন্যান্য

বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য পাঠানো হলো দুর্গোৎসবের টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ২৩, ২০২৪ ৯:০৯ অপরাহ্ণ । ২৮ জন

বন্যাদুর্গত ফেনী ও নোয়াখালীর মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বরিশালের সব শ্রেণিপেশার মানুষ। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মাবলম্বী মানুষ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চাঁদা তুলে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য পাঠাচ্ছেন। এমনকি শুক্রবার (২৩ আগস্ট) নগরীর সব মসজিদে জুমার নামাজে বন্যাকবলিতদের জন্য বিশেষ দোয়া-মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পরে মসজিদে মসজিদে দুর্গতদের জন্য অর্থ সহায়তা তোলা হয়েছে।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি বিএম কলেজ ও নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মসজিদে মসজিদে দুর্গতদের জন্য অর্থ সহায়তা তুলেছেন। সেইসঙ্গে নগরীর বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকেও অর্থ তোলা হয়। এতে অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন সব ধর্মাবলম্বী মানুষ। অনেকে নিজের জমানো অর্থ তাদের হাতে তুলে দেন।

বরিশাল ইমাম সমিতির উদ্যোগে বন্যার্তদের জন্য অর্থ তোলা হয়েছে বলে জানালেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরী এবং প্রতিটি মসজিদ থেকে অর্থ সহায়তা তোলা হয়েছে। আমাদের কয়েকজন প্রতিনিধির মাধ্যমে এই অর্থ বন্যার্তদের জন্য পাঠানো হবে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার নগরীর শ্রী শ্রী শংকর মঠ পূজা উদযাপন কমিটিসহ পাঁচটি মন্দিরের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের স্বেচ্ছাসেবক দল বন্যার্তদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। শারদীয় দুর্গোৎসবের জন্য তোলা অর্থের একটি অংশ স্বেচ্ছাসেবক দলের মাধ্যমে বন্যাদুর্গত ফেনী-নোয়াখালীর মানুষের জন্য পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণারঞ্জন চক্রবর্তীর স্মৃতি দুর্গা মন্দির কমিটি দুর্গোৎসবের টাকা আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহর মাধ্যমে বন্যাদুর্গতদের জন্য পাঠিয়েছেন।

শ্রী শ্রী শংকর মঠ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লিমন কৃষ্ণ সাহা কানু ও সাধারণ সম্পাদক আকাশ দাশ বলেছেন, প্রতি বছর শারদীয় দুর্গোৎসব ঘিরে বড় আয়োজন থাকে আমাদের মন্দিরে। এজন্য বছরের শুরু থেকে উৎসবের জন্য অর্থ তোলা হয়। এ বছর হঠাৎ ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ আট জেলার মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। যে পরিমাণ পানির স্রোত দেখছি, তাতে বুঝেছি বড় ধরনের বিপদে পড়েছেন এসব জেলার মানুষজন। এ অবস্থায় আমরা মন্দিরের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে আলোচনা করে দুর্গোৎসবের অর্থ এবং নগরীর আরও কয়েকটি মন্দির থেকে টাকা তুলে স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে বন্যায় আক্রান্ত মানুষের জন্য পাঠিয়েছি। কারণ আগে মানবতা, পরে উৎসব। মানুষ বাঁচলে, পরে উৎসব করা যাবে।

সাধারণ সম্পাদক আকাশ দাশ বলেন, ‘এই বিপদ সব সময় থাকবে না। দ্রুত কেটে যাবে। এই মুহূর্তে বন্যাদুর্গত মানুষকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। সেজন্য আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি নগরী, জেলার সব মন্দির কমিটির নিজস্ব তহবিল ও দুর্গোৎসবের অর্থ দিয়ে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি আমরা। ইতোমধ্যে সবাই সাড়া দিয়েছেন। প্রতিটি মন্দিরের সভাপতি-সম্পাদক আমাদের নিশ্চিত করেছেন, যে যার মন্দিরের অর্থ স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।’

পূজায় বাজেট কমিয়ে এবার বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা, এমনটি জানালেন নগরীর দক্ষিণারঞ্জন চক্রবর্তীর স্মৃতি দুর্গা মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক অয়ন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘উৎসব প্রতি বছর করা যাবে। এ বছর আমরা ছোট আকারে করবো। কিন্তু যারা বন্যায় এখন মারাত্মক দুর্ভোগে রয়েছেন তাদের আগে রক্ষা করতে হবে। তাই আমাদের জায়গা থেকে পূজার বাজেটের একটি অংশ আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে পাঠিয়েছি। আমাদের মন্দিরগুলোর পক্ষ থেকে আরও যারা অর্থ সহায়তা দেবেন কিংবা দিচ্ছেন, তাদেরকে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনে পাঠাতে বলেছি আমরা।’