ঢাকামঙ্গলবার , ৮ অক্টোবর ২০২৪
  • অন্যান্য

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক ব্যবসা থেকে সরকারের অংশীদারিত্ব প্রত্যাহারের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ৮, ২০২৪ ১১:৪৬ অপরাহ্ণ । ৬১ জন

জনস্বাস্থ্য নীতিতে অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রতিহতকরণের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে আরো এগিয়ে নিতে কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)। আগামীকাল ৯ অক্টোবর জাতীয় তামাক মুক্ত দিবস উপলক্ষে তারা এ দাবি জানিয়েছে। এবারের জাতীয় তামাক মুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক ব্যবসা থেকে সরকারের অংশীদারত্ব প্রত্যাহার করা হোক”। ২০১১ সাল থেকে দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি নিয়মিত পালিত হচ্ছে বলেও প্রতিষ্ঠানটি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর ২০২৪) বিকেলে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিএটির ট্যাক্স ফাঁকি, সিএসআর ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের মতো অভিযোগের বিপক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত আন্তরিক হলেও তামাক কোম্পানিগুলোর কূটকৌশল এবং বেপরোয়া আইন লঙ্ঘনের কারণে এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি । বিএটি প্রতি বছর সরকারের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে অর্থ প্রদানের সংবাদ গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করে। সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে প্রভাব বিস্তার এবং সমাজে ইতিবাচক অবস্থান তৈরীর জন্য এটা তাদের একটি প্রচারণা কৌশল । ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি (BAT) শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি প্রদান না করে নিয়মিত শ্রম আইন লঙ্ঘন করছে। যার ফলশ্রুতিতে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা ও সাভার ফ্যাক্টরিতে ব্যাপক শ্রমিক অসন্তোষের প্রমাণ মিলেছে। শ্রমিকদের এই দাবি পূরণের আন্দোলন সুস্পষ্ট করে যে এই কোম্পানিটির শ্রমিক কল্যাণ ও সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বিভ্রান্তি তৈরীর উদ্দেশ্যে পরিচালিত। অথচ গত ৬ অক্টোবর বিজনেস বার্তায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সিগারেট ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি করে রেকর্ড পরিমান মুনাফা (২১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা) করেছে বিএটিবি। সংশ্লিষ্ট খরচ ও কর বাদ দেওয়ার পর কোম্পানিটির মোট মুনাফা ছিলো ৯৫০ কোটি টাকা, যা গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এছাড়াও গত ১লা অক্টোবর যুগান্তরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মজুত সিগারেট বিক্রি করে ২১০ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে তামাক কোম্পানিটি। প্রতিবছরই বাজেটের আগে নিজস্ব ১৪টি ওয়্যারহাউজে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) সিগারেট মজুত করে। বাজেটের পর বাড়তি দামে সেই সিগারেট বাজারে বিক্রি করে মুনাফার পুরোটাই পকেটে ভরে। এতে করে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারায় সরকার। ইতিবাচক বিষয় যে, এবার বাজেটের আগে মজুতকৃত সিগারেটের ওপর ২১০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বিএটিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ-ভ্যাট)।

শুধু তাই নয় , কোম্পানিগুলো বিএসটিআই’র পণ্য মোড়কজাতকরণ বিধিমালা, ২০২১-এর বিধি-৫-এর উপবিধি (৬) লঙ্ঘন করছে। কোম্পানিগুলো মুসক আইন ও বিধিতে প্রভাব খাটিয়ে এসআরও তে ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য’র পরিবর্তে শুধুমাত্র ‘খুচরা মূল্য’ লিখিয়ে নিয়েছে। অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা পণ্যের মোড়কে মুদ্রিত মূল্যের থেকে কম মূল্যে কোম্পানি থেকে পণ্য ক্রয় করেন এবং লাভসহ মোড়কে উল্লেখিত মূল্যে বিক্রয় করলেও তামাক কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্যাকেটের গায়ে মুদ্রিত মূল্য হলো খুচরা বিক্রেতার ক্রয় মূল্য। তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখিত না থাকায় বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে মূলস্তরভেদে ১০-৩৫ টাকা অধিক মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় করছে। এই অতিরিক্ত মূল্যের উপর কোনো প্রকার কর আদায় না হওয়ার কারণে, সরকার প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এই রাজস্ব ফাঁকির অর্থ তামাক কোম্পানি সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসুচি (সিএসআর) এর নামে প্রচার প্রচারণায় ব্যয় করছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বাধা বহুজাতিক কোম্পানিতে বিদ্যমান সরকারের শেয়ার। মাত্র দশমিক ছয় চার শতাংশ (০.৬৪%) সরকারি শেয়ারের অজুহাতে তামাক কোম্পানিগুলো পরিচালনা পর্ষদে উচ্চ পর্যায়ের একাধিক সরকারি কর্মকর্তাগণ সম্পৃক্ত থাকছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে নামমাত্র এই শেয়ারের কারনে তামাক কোম্পানি নীতিনির্ধারক, সরকারি কর্মকর্তা এবং প্রশাসনযন্ত্রের সঙ্গে মিশে ব্যবসায়িক সুবিধা আদায় এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মকাণ্ডে বাঁধা প্রদানের চেষ্টা করেছে। একইসঙ্গে ব্যাপকভাবে সিএসআর কার্যক্রম প্রচার করে জনমনে তামাক কোম্পানি সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরির চেষ্টা করেছে।

আইন লংঘনকারী এধরনের কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডে সরকারি কর্মকর্তাগণের যুক্ত থাকার বিষয়টি জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। জনস্বাস্থ্যহানীকর পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার মোটেও কাম্য নয় এবং তা তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট মনে করে, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াবহতা থেকে রক্ষায় এবং সার্বিক জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে দ্রুত তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের অংশীদারিত্ব প্রত্যাহার করা উচিত ।