ঢাকামঙ্গলবার , ২২ অক্টোবর ২০২৪
  • অন্যান্য

আজকের সর্বশেষ সবখবর

পলিথিন বা প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ কেন নিষিদ্ধ করা উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ২২, ২০২৪ ১১:২২ পূর্বাহ্ণ । ৩০ জন

শহুরে এলাকার বর্জ্য পদার্থের একটা বিরাট অংশ হচ্ছে পলিথিন বা প্লাস্টিক। উপাদানগত দিক থেকে এই পলিব্যাগগুলো মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী, পরিবেশ ও আবহাওয়ার জন্য ক্ষতিকর। তাই পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে যাবতীয় প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ ও পলিথিনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এর আগে সুপারশপগুলোতে পলিথিন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কাঁচাবাজারগুলোতে এই নিয়ম শুরু হবে নভেম্বর থেকে। এই নিষেধাজ্ঞা কেন জরুরি, পলিথিন নিষিদ্ধ হলে এর বিকল্প কি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার উপযোগিতাই বা কতটুকু, চলুন, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা যাক।

প্লাস্টিকের ব্যাগ বা পলিথিন নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা

জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি

পরিত্যক্ত প্লাস্টিক মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এই অনুপ্রবেশের ফলে দীর্ঘমেয়াদে ফুসফুস ও কিডনিজনিত রোগের উপক্রম ঘটে।

প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির উপকরণগুলোর মধ্যে বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেট্সের মতো রাসায়নিক পদার্থ থাকে। এগুলো হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন সমস্যা ও ক্যান্সারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতার সৃষ্টি করে।

এই ব্যাগগুলো যখন পোড়ানো হয় তখন ডাইঅক্সিন ও ফুরানের মতো অত্যন্ত বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়। এগুলো বায়ু দূষণের মধ্য দিয়ে শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

অন্যান্য প্রাণীদের জন্য হুমকি

মাইক্রোপ্লাস্টিক যে কোনো উভচর প্রাণীর পরিপাকতন্ত্রকে বিনষ্ট করে দেয়, যার ফলে অপুষ্টি, অনাহার ও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও ঘটতে পারে। বিশেষত সামুদ্রিক কচ্ছপগুলো প্রায়ই ভাসমান প্লাস্টিকের ব্যাগগুলোকে জেলিফিশ ভেবে ভুল করে, যেটি তাদের প্রধান খাদ্যগুলোর একটি। গরু ও হাতির মতো বড় বড় প্রাণীদের পাকস্থলীও প্লাস্টিকের কারণে কার্যকারিতা হারায়।

সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের বিনাশ

বেশিরভাগ প্লাস্টিক বর্জ্যের চূড়ান্ত গন্তব্য সাগর। প্লাস্টিক ব্যাগের ক্ষয়ে যাওয়া অংশগুলো পানিতে দীর্ঘদিন ধরে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এভাবে সময় যত যায় জলাশয়ের ওপর আবর্জনাযুক্ত বিশাল এলাকা সৃষ্টি করে। এই আবর্জনা স্রোতের সঙ্গে সাগরের খাদ্য-শৃঙ্খলে প্রবেশ করে ক্ষুদ্রতম প্লাঙ্কটন থেকে শুরু করে বৃহাদাকার তিমিরও মৃত্যুর কারণ হয়।

মাছ, সামুদ্রিক পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ গোটা সামুদ্রিক প্রজাতি প্লাস্টিক দূষণের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রয়োজনীয় প্রবাল প্রাচীরগুলোকে ঢেকে দেয়। ফলে সেগুলোতে সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়।

জলবায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব

প্লাস্টিক ব্যাগ পেট্রোলিয়ামভিত্তিক পণ্য থেকে তৈরি করা হয়, আর এই উৎপাদনে প্রয়োজন হয় প্রচুর পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি। অপরদিকে, নির্গত হয় কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস। এছাড়া উৎপাদনের উদ্বৃত্ত অংশগুলো যেখানে ফেলে দেওয়া হয়, সেখান থেকেও এ ধরনের বিষাক্ত গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্ত হয়।

পুনর্ব্যবহারের অযোগ্য বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহারের পর পলিব্যাগগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। তখনও ধোঁয়ার মাধ্যমে নির্গত হয় ক্ষতিকারক গ্যাস। এভাবে সামগ্রিকভাবে পুরো বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে ফেলে প্লাস্টিক।

এ কারণে পলিথিন বা প্লাস্টিক শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, বন্যপ্রাণী ও আবহাওয়া সুরক্ষিত হবে। তাই বিগত কয়েক দশক ধরে প্রলম্বিত হওয়া এই নিষেধাজ্ঞার অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। এই পরিপ্রেক্ষিতে সদাই বহনের জন্য পাট, তুলা, উল, শণ, বেত, কাগজ, ও কাপড়ের মতো পরিবেশ-বান্ধব ব্যাগগুলো হতে পারে উৎকৃষ্ট বিকল্প। তবে এই পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়। কেননা নতুন ব্যাগগুলো প্রসারের পূর্বে এর শিল্প, অর্থনৈতিক, ও পরিবেশগত প্রভাবগুলো বিবেচনায় আনতে হবে। এর জন্য ভোক্তা স্তরের পাশাপাশি প্রস্তুতকারক পর্যায়েও ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রয়োজন।