সিগারেট কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অংশীদার হিসেবে দাবি করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিরোধীতা করছে। তাই তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের দাবী সত্যিই বিস্ময়কর এবং হাস্যকর! বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট মনে করে, প্রকৃতপক্ষে রোগ ও মৃত্যু সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনা মানে, জনস্বাস্থ্য রক্ষাকে অবজ্ঞা করা এবং জনগণের রোগ ও মৃত্যু নিয়ে বাণিজ্য করাকে স্বীকৃতি দেয়া।
আজ (৬ নভেম্বর) বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সংগঠনটি।
এতে বলা হয়, আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, সিগারেট কোম্পানিগুলো নিজেদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অংশীদার হিসেবে দাবি করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের বিরোধীতা করছে। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে সিগারেট কোম্পানির মতামত নেয়া হয়নি বলে প্রচার করা হয়েছে। প্রথমেই বিবেচনা করা দরকার তামাক কোম্পানির এ দাবি কতটুকু সাংবিধানিক এবং যৌক্তিক। স্টেকহোল্ডার বা অংশীজন মূলত তারাই, যারা একই ধরণের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের সহযোগী। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু কমানো এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন।
অপরদিকে তামাক কোম্পানির উদ্দেশ্য শুধু মুনাফা অর্জন। জনস্বাস্থ্য নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই। বিশ্বের কোন তামাক কোম্পানিই জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে নিজেদের ব্যবসা এবং মুনাফা কমাতে চাইবে না। তামাক কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা বাড়াতে নানা কৌশলে কিশোর ও তরুণদের সিগারেট সেবনে উৎসাহী করছে। ঢাকার অনেক রেষ্টুরেন্টে সিগারেট কোম্পানির টাকায় তরুণদের উৎসাহী করতে ধূমপানের জন্য স্থান তৈরী করে দেয়া হয়েছে। সম্ভব হলে তারা হয়তো শিশুদেরও ধূমপায়ী বানানোর চেষ্টা চালাবে।
সিগারেট এবং তামাক কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্য এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য পারস্পারিক সাংঘর্ষিক ও সম্পূর্ণ বিপরীত। সাংঘর্ষিক উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের কোনভাবেই তামাক কোম্পানিগুলো অংশীদার দাবি করতে পারে না। তামাক কোম্পানিগুলো প্রত্যাশা করে সিগারেট সেবন বাড়ুক যাতে করে তাদের ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটে।
তামাকজনিত কারণে সৃষ্ট রোগ ও মৃত্যু কমানো কোনভাবেই তাদের উদ্দেশ্য নয়। এগুলো যদি সিগারেট কোম্পানির উদ্দেশ্য না হয়, তবে তারা কিভাবে নিজেদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অংশীজন হিসেবে দাবি করে। তামাক কোম্পানিগুলোর এ ধরনের দাবী সত্যিই বিস্ময়কর এবং হাস্যকর! বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট মনে করে, প্রকৃতপক্ষে রোগ ও মৃত্যু সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিপক্ষ। প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনা মানে, জনস্বাস্থ্য রক্ষাকে অবজ্ঞা করা এবং জনগণের রোগ ও মৃত্যু নিয়ে বাণিজ্য করাকে স্বীকৃতি দেয়া।
তামাক মাদকের প্রবেশ পথ। রাজস্ব হারানোর মিথ্যা ভয়ে নিজের সন্তানদের তামাক কোম্পানিগুলোর হাতে তুলে দেয়া যাবে না। তামাক কোম্পানির অবাধ ব্যবসা মানে, আমাদের সন্তানদের ধূমপানে আসক্ত করার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং রাষ্ট্রের নাগরিকদের রোগ ও মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে কোম্পানির মতামত নেয়া সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি-র পরিপন্থী। সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে মদ ও স্বাস্থ্য হানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত তামাক ব্যবহারে আরো কঠোর হওয়া। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আগামী প্রজন্মকে সিগারেট ও তামাক হতে দুরে রাখতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি দ্রুত অধিক শক্তিশালী করা জরুরি।