সিগারেটের প্যাকেটে লিখিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রি করায় বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) কোস্পানি এবং দেশের জায়ান্ট রিটেইল চেইনশপ ‘স্বপ্ন’কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। জরিমানার এ অর্থ ২৫ হাজার করে উভয় প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করতে হবে। আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর ২০২৪) সকালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান নিজে এ শুনানি করেন।
এসময় অধিদপ্তরের কার্যক্রম উপবিভাগের উপপরিচালক আতিয়া সুলতানা, গবেষণাগার শাখার সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস, স্বপ্ন ও বিএটির প্রতিনিধি, বিএটির আইনজীবী এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের (বাটা) প্রতিনিধিবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
শুনানিতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান প্রথমেই বিএটি ও স্বপ্ন’র সরবরাহ করা সবধরনের নথি যাচাই করেন এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তিনি বিএটি ও স্বপ্ন-এর মধ্যে সম্পদিত চুক্তিপত্র ত্রুটিপূর্ণ ও আইন পরিপন্থী বলে মত দেন। কারণ তাদের চুক্তিপত্রে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট কিনে সেটা স্বপ্ন নিজের মত মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবে বলে উল্লেখ রয়েছে। এসময় মহাপরিচালক তাদের মধ্যকার চুক্তিপত্র পরিমার্জন করার জন্য ৪ সপ্তাহ সময় নির্ধরণ করে দেন। একইসঙ্গে জরিমানার অর্থ উভয় পক্ষকে ৫০ শতাংশ করে পরিশোধের জন্য চূড়ান্ত রায় দেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমআরপির চেয়ে বেশি দামে সিগারেট বিক্রির না করার বিষয়ে সতর্ক করেন।
শুনানিতে মহাপরিচালক বলেন, কোনো পণ্যই সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। সিগারেট বিক্রি করতে হলে এমআরপিতেই করতে হবে। তিনি অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান প্যাকেটে মুদ্রিত এমআরপি চেয়ে বেশি দামে সিগাটে বিক্রি করতে তাদের বিরুদ্ধে এবং খোলা বাজারেও অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেন।
ভোক্তা অধিকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি) এর আহবায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের এই উদ্যোগ সিগারেটের বাজারকে নিয়মের মধ্যে আনবে। যা দীর্ঘ মেয়াদে তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর অবদান রাখার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে অবদান রাখবে। তিনি এই পদক্ষেপের জন্য ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান।
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারি সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের এই পদক্ষেপ এমআরপি’তে সিগারেট বিক্রি নিশ্চিত করবে যা তামাক কোম্পনির অযাচিত মুনাফা অর্জনের পথকে বন্ধ করবে। এটি তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতিবাচক
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ‘স্বপ্ন’র একটি আউটলেটে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বিএটির উৎপাদিত সিগারেট প্যাকেটে মুদ্রিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের চেয়ে অনেকটা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখে। স্বপ্ন’র কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ স্বীকার করার পর তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেই জরিমানার বিষয়ে আপত্তি জানালে স্বপ্ন, বিএটি ও বাটাকে নিয়ে শুনানির আয়োজন করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
বাংলাদেশে সবধরনের পণ্য সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) এ বিক্রি হলেও তামাকজাত দ্রব্য বিশেষত সিগারেট এমআরপির চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে বলে বহু বছর ধরে তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। যা ভোক্তা অধিকার সংক্ষেণ আইন, ২০০৯ এর পরিপন্থী। এভাবে অবৈধভাবে ব্যবসার মাধ্যমে তামাক কোম্পানিগুলো প্রতিবছর ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর গবেষণায় দেখা যায় কোম্পানিগুলো সিগারেটের খুচরা বিক্রিতে প্যাকেটে মুদ্রিত এমআরপির চেয়ে ৫% থেকে ২০% পর্যন্ত বেশি দাম নেয়। যা প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ জরিমানার মাধ্যমে তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো।