সিরাজগঞ্জ শহর থেকে রেলপথে ঢাকা যাওয়ার একমাত্র ট্রেন ‘সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস’ দীর্ঘ ৩ মাস বন্ধ থাকার পর আগামী ১৫ নভেম্বর থেকে আবার চলাচল শুরু করতে যাচ্ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতি নেবার নির্দেশনা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (পাকশী) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ।
এর আগে গত সোমবার (১১ নভেম্বর) বাংলাদেশ রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (পশ্চিম) পক্ষে ডেপুটি চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (পশ্চিম) মোসা. হাসিনা খাতুন স্বাক্ষরিত এক পত্রে ট্রেন পুনরায় চালুকরণের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহরের বাজার স্টেশন ও বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত শহীদ এম. মনসুর আলী স্টেশন দুটি ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর থেকে স্টেশন দুটির কার্যক্রম এবং সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্ধ করে দেয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিকে স্টেশন দুটি মেরামত ও ট্রেন চালুর দাবিতে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বারকলিপি প্রদান, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু। পুনরায় এই ট্রেন চালুর মূল নায়ক হিসেবে তাকেই দেখছেন সিরাজগঞ্জবাসী। এতে সহযোগিতা করেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদসহ সিরাজগঞ্জের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (পাকশী) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদ বলেন, বন্ধ হয়ে যাওয়া সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১৫ নভেম্বর থেকে আগের নিয়মেই সিরাজগঞ্জ ও ঢাকার মধ্যে চলাচল করবে। এই সময়ের মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত সিরাজগঞ্জ বাজার রেলওয়ে স্টেশনে কিছু নতুন যন্ত্রাংশ যুক্ত ও সরঞ্জামগুলো আংশিক মেরামত করা হবে। তবে শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন সম্পুর্ণ ঠিক করতে আরেকটু সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, আগে বাজার স্টেশন থেকে টিকিট অনলাইন ছিল না। বাজার স্টেশনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ট্রেনের সব টিকিট পুড়ে গেছে। এমতাবস্থায় ১৫ তারিখ থেকে চলাচল শুরু করতে যাওয়া সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেসের টিকিট এখন থেকে অনলাইনে পাওয়া যাবে। আমরা চেষ্টা করছি যতো দ্রুত সম্ভব শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশনও পরিপূর্ণভাবে চালু করতে।
এ ব্যাপারে সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই রেলওয়ের সচিব, জেলা বিএনপির সভাপতি রুমানা মাহমুদ ও ইকোনমিক জোনের পরিচালক মনোয়ার হোসেনসহ সিরাজগঞ্জের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষসহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের। আমি সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতা জানাই সিরাজগঞ্জে কর্মরত সব গণমাধ্যমকর্মীদের। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।
তিনি আরও বলেন, আমি ট্রেন চালুর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছি, সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে মানববন্ধন করেছি, স্মারকলিপি দিয়েছি। সচিবের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করেছি। অবশেষে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু হতে যাচ্ছে, এই অর্জন সিরাজগঞ্জবাসীর। তবে আমি দাবি করেছিলাম, ট্রেনে এসি বগি সংযুক্ত করতে হবে এবং এক্সপ্রেস ট্রেন লোকালের মতো না চলে এক্সপ্রেসের মতোই চলবে। আমার আরও দাবি থাকবে, যমুনা রেলসেতু চালু হওয়ার পরে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা ট্রেনগুলো যেন সিরাজগঞ্জ শহর ছুয়ে চলাচল করে। এতে শিল্পাঞ্চলে পরিণত হতে যাওয়া সিরাজগঞ্জের মানুষ অনেক উপকৃত হবে।