ঢাকাশনিবার , ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা

জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এখনই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের দাবি তরুণ চিকিৎসকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিসেম্বর ২১, ২০২৪ ৫:০৩ অপরাহ্ণ । ৬৪ জন

বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর ছয়টি ধারায় দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)–এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধন করার দাবি জানিয়েছে তরুণ চিকিৎসকরা।

সেগুলো হলো, সকল পাবলিক প্লেসে ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান (DSA) নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে (Points of Sale) তামাকজাত পণ্য প্রর্দশনী (Product Display) নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যে কোন ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০% থেকে বাড়িয়ে ৯০% করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।

আজ শনিবার (২১ ডিসেম্বর ২০২৪) বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির হলরুমে আয়োজিত ‘‘জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ: তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা’’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় এই দাবি করেন তারা। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতাল এন্ড ওয়েলফেয়ার হোম-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হাই-এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি’র প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারক। তিনি বলেন, তামাকব্যবহার জনিত কারণে দেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মারা যায়। দিন যত গড়াবে তামাকজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা তত বাড়বে। তাই এই অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। তা না হলে তামাকজনিত এই অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।

কর্মশালায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ই-সিগারেট মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এর ব্যবহারে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। ই-সিগারেটের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ইতোমধ্যেই ৪২টি দেশ ই-সিগারেটকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ বেলজিয়াম আগামী বছরের জানুয়ারী থেকে ডিসপোজেবল ভ্যাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করছে। মূলত শিশুদের আকৃষ্টকরণ এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। তাই আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসের (ভ্যাপিং, ই-সিগারেট) নিষিদ্ধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ এখই আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রী কিডস, বাংলাদেশের এডভোকেসি ম্যানেজার মো. আতাউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাটেল অব মাইন্ডস নামে তরুণ শিক্ষার্থীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে সিগারেটের প্রচারণা করে তামাক কোম্পানি। একই সাথে রেস্তোরাঁগুলোতে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) তৈরি করে দেয়; যাতে তরুণরা সহজেই তামাক পণ্যের ওপর আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই তামাক কোম্পানির এসব অপকৌশল বন্ধে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর) এবং পয়েন্ট অব সেলস্-এ তামাক পণ্যের প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।

এ সময় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রী কিডস, বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।