দেশে যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ভাটা চলছে, তখন ব্যতিক্রম শুধু মসুর ডাল। পণ্যটির আমদানি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই–নভেম্বরে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় মসুর ডাল আমদানি ৭২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যে দেখা যায়, ডালজাতীয় পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় মসুর ডাল। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এই ডাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টন। অথচ এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টন। সে হিসাবে পাঁচ মাসে আমদানি বেড়েছে প্রায় ৭২ শতাংশ।
ডাল আমদানি বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক ও ডালমিল ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ বলেন, ভোগ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ব্যবসায়ী রয়েছেন ডাল আমদানিতে। পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি তুলে নেওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরে ছোট–মাঝারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণপত্র খোলার সুযোগ পেয়েছে। প্রতিযোগিতার ফলে আমদানি হঠাৎ বেড়েছে।
আমদানি বাড়ায় ডালের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, নিত্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্থিতিশীল রয়েছে ডালের দাম। গত এক বছরে এটির দাম বাড়েনি। উল্টো মাঝারি আকারের মসুর ডালের দাম এক বছর আগের তুলনায় ৬ শতাংশ কমে এখন ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা দানার মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। আর সবচেয়ে চিকন বা সরু আকারের মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমদানি বাড়ায় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে বিক্রির চাপ বেড়েছে। ফলে মসুর ডালের দামও কিছুটা পড়তির দিকে। কেজিপ্রতি অন্তত ৫ টাকা কমে ৯৫ টাকায় ডাল বেচাকেনা হচ্ছে।
দেশে বছরে মসুর ডালের চাহিদা প্রায় সাত লাখ টন। এই চাহিদার ৩০ শতাংশ বা ২ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদন হয়। বাকি ৭০ শতাংশ বা ৫ লাখ টন ডাল আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।
সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত অর্থবছরে দেশে মসুর ডাল উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার টন, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১২ হাজার টন কম। দেশে উৎপাদন কমতে থাকায় বিদেশি ডালের আমদানিনির্ভরতা বেড়ে চলেছে। তবে মসুর ডালের পাশাপাশি অন্য সব ধরনের ডালজাতীয় পণ্যের আমদানিও বেড়েছে। যেমন চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সব ধরনের ডাল আমদানি হয়েছে পাঁচ লাখ টন। গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার টন।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে। মোট ডাল আমদানির প্রায় ৬০ শতাংশ অস্ট্রেলিয়া, প্রায় ৩০ শতাংশ কানাডা ও ১০ শতাংশ ভারত থেকে হয়। এ ছাড়া খুব সামান্য পরিমাণে মসুর ডাল আমদানি হয় নেপাল থেকে।
দেশে বিভিন্ন ছোট–মাঝারি ও বড় মিলিয়ে ৮৭টি প্রতিষ্ঠান এবার ডাল আমদানি করেছে, যা অন্য যেকোনো নিত্যপণ্যের চেয়ে বেশি।