দেশীগাছ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আন্দোলন এর উদ্যোগে জেলা প্রশাসক জনাব সালেহীন তানভীর গাজী গতকাল বুধবার বুধবার বিকাল ৩টায় জেলা প্রশাসন জয়পুরহাট এর মূল ভবনের পিছনে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল শিক্ষক “শ্যামল জানা” নিয়ে জেলা প্রশাসন জয়পুরহাট এর মূল ভবনের পিছনে একটি বট বৃক্ষের চারা রোপন করা হয়।
এসময় সেখানে অংশগ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মুক্তিযুদ্ধে জয়পুহাটের অন্যতম সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাজা চৌধুরী, নাট্যজন দীলিপ সেন, বিশিষ্ট ছড়াকার মুস্তফা আনসারী, লোকসংগীত শিল্পী তামান্না ইয়াসমিন, কবি যতন দেবনাথ, কবি শামীম নাজির, অধ্যাপক অচিন্ত কুণ্ড, শিক্ষক সুফিয়া সুলতানা, আব্দুল আলীম সরদার, দেশীগাছ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ আন্দোলন”-এর উদ্যোক্তা- কৃষিবিদ রতন মণ্ডল, একুশে আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লেখক লালন হোসেন, অনলাইন একটিভিস্ট সাজেদুর রহমান সুমন, কলেজের শিক্ষার্থী বিরেন, যন্ত্রশিল্পী তপন, ডিসি অফিসের কর্মকর্তা-কমর্চারীবৃন্দসহ নাম না জানা অনেকেই।
এসময় জেলা প্রশাসক জনাব সালেহীন তানভীর গাজী মহোদয় বলেন, পৃথিবী একমাত্র গ্রহ যেখানে মানুষ বাস করতে পারে শুধু বৃক্ষ থাকার কারণে। মঙ্গল গ্রহ বা চাঁদে মানুষের বসবাস করার উপযোগী করার জন্য কিভাবে বৃক্ষ প্রতিষ্ঠা করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করতেই কোটি কোটি ডলার ব্যয় করছে। অথচ আমাদের বাসবাসের পৃথিবীতে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন করছি। আমাদের অফিসের পাশে মডেল মসজিদের সামনের জন্য কিছু বৃক্ষ কেটে রাস্তা প্রশস্তকরনের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার অফিস নিয়ে আসে। আমি তা ফিরিয়ে দিয়ে বলি- একটিও গাছ না কেটে কিভাবে রাস্তা প্রশস্ত করা যায় তা একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে নিয়ে আসেন। তিনি আরও বলেন- যেকোনো অবকাঠামোগত উন্নয়নে কোন গাছ না কেটে নতুন নতুন বৃক্ষ রোপণ করতে হবে আমাদের বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য।
পশ্চিম বাংলার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি এলাকার স্কুল শিক্ষক শ্যামল জানা তার স্লোগান “থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে বৃক্ষরোপণ বিশ্বজুড়ে” এবং “সারা পৃথিবী আমার নিজের বাগান”
উল্লেখ করে বলেন, সামনে সংকটময় জলবায়ু আমাদের সবাইকে সম্মুখীন হতে হবে। আর এর মোকাবেলা একক কোন ব্যক্তি বা দেশ ব্যবস্থা গ্রহণে সম্ভব নয়। সবদেশে সব মানুষকে সচেতনভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই ভাবনা থেকে সমস্ত ভারত ও প্রতিবেশী দেশগুলোতে সবুজায়নের বার্তা দিতে চাই।
আর আজ আমাদের সবচেয়ে আত্মিক সম্পর্কিত বন্ধু প্রতীম দেশ বাংলাদেশে প্রথম পদার্পণ। এখানে এই বটবৃক্ষ রোপণ আমার ৫ হাজার লক্ষ্যের মধ্যে ৮৪১ তম। আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হলো এর মধ্যে দিয়ে।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাজা চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধের রক্ত দানের মাধ্যমে সম্পর্কিত বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের এই শিক্ষকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি পৃথিবী রেখে যেতে বৃক্ষ রোপণের কোন বিকল্প নেই। দেশীগাছ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আন্দোলনের মাধ্যমে- মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নবজাগরণে পুনরুজ্জীবিত করতে- গতবছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে উপলক্ষ্য জয়পুরহাটে বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ৫০ টি স্থানে বটগাছের চারা রোপণ কর্মসূচি পালন করি এবং বর্তমানে বট-অশ্বত্থ চারা রোপণ ও বিতরণ কর্মসূচী চলমান রয়েছে।
সবশেষে উক্ত পরিবেশবাদী আন্দোলনের উদ্যোক্তা- রতন মণ্ডল বলেন, ‘পরিবেশ-প্রকৃতি রক্ষার যে উপলব্ধিতে পাখি-পতঙ্গের নিরবিচ্ছিন্ন আহারের জন্য একাধিক বটবৃক্ষ একটির পর আর একটি ফলদান করে’ সে উপলব্ধি সারাবিশ্বে সব মানুষে ছড়িয়ে দিতে এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে বটবৃক্ষসহ দেশীয় গাছ রোপণ ও অন্যান্য কর্মসূচী চলমান থাকবে।
এরপর জয়পুরহাটে ছোট যমুনা নদীর তীরে এশিয়া তথা বিশ্বে এমাত্র অদ্বিতীয় ঐতিহাসিক বারো শিবালয় মন্দির প্রাঙ্গনে আরো একটি বটবৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে ঐদিনের কর্মসূচি শেষ করে।