ঢাকাবুধবার , ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

বেসামরিক আগ্নেয়াস্ত্র: নিরাপত্তা, নাকি হুমকি?

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫ ১:০১ অপরাহ্ণ । ৬৫ জন

রাতে নির্জন রাস্তায় একা হাঁটছিলেন জন মিলার। সামনের গলির মোড়ে হঠাৎ দুইজন মুখোশধারী দুষ্কৃতকারী তার পথ আটকায়। আতঙ্কে জমে গেলেও তিনি দ্রুত কোমরে থাকা পিস্তল বের করে দেখালেন। মুহূর্তেই আক্রমণকারীরা পালিয়ে গেল। সে রাতে আগ্নেয়াস্ত্র তাকে রক্ষা করেছিল। কিন্তু অন্য এক শহরে, আরেক রাতে, ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটল। এক তরুণ বন্ধুদের সঙ্গে তর্কের একপর্যায়ে রাগের মাথায় বন্দুক বের করে গুলি চালায়, মুহূর্তেই প্রাণ হারায় একজন।

এমন ঘটনাই বেসামরিক আগ্নেয়াস্ত্রের বিতর্ককে সামনে নিয়ে আসে—এটি কি আসলেই নিরাপত্তা দেয়, নাকি সমাজের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়?

বিশ্বব্যাপী আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা
স্মল আর্মস সার্ভের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বেসামরিক নাগরিকদের হাতে প্রায় ৮৫ কোটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, যা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের সংখ্যার চেয়েও বেশি। প্রতি ১০০ জনে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে—১২০.৫টি। এরপরে ইয়েমেন (৫২.৮), মন্টেনেগ্রো (৩৯.১) ও কানাডা (৩৪.৭)।

অন্যদিকে, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে এই হার অত্যন্ত কম (প্রতি ১০০ জনে ০.৩-০.৫টি)। এসব দেশে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর হওয়ায় নাগরিকদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার হারও কম।

নিরাপত্তার যুক্তি: অস্ত্র রাখা কি আত্মরক্ষার অধিকার?
আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানার পক্ষে যারা, তারা একে আত্মরক্ষার জন্য অপরিহার্য বলে মনে করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রাইফেল অ্যাসোসিয়েশন (NRA)-এর মতে, একজন সশস্ত্র নাগরিক অপরাধীদের জন্য বড় বাধা সৃষ্টি করতে পারেন।

জনপ্রিয় যুক্তি হলো, “অস্ত্র নিষিদ্ধ করলে শুধুমাত্র আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিকরাই নিরস্ত্র থাকবে, অপরাধীরা তবুও অস্ত্র সংগ্রহ করবে।”

এছাড়া, কিছু গবেষণা দেখায় যে যেখানে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা বেশি, সেসব স্থানে ডাকাতি ও ব্যক্তিগত আক্রমণের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম।

অস্ত্রের সহজলভ্যতা: সহিংসতা বাড়ায়?
অন্যদিকে, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে থাকা বিশেষজ্ঞরা বলেন, অস্ত্রের সহজলভ্যতা সহিংসতা ও হত্যার হার বাড়িয়ে দেয়। হার্ভার্ড ইনজুরি কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যেসব দেশে নাগরিকদের কাছে বেশি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে, সেসব দেশে বন্দুক সহিংসতার হারও বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “অস্ত্রবহনের প্রবণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক সহিংসতা ও পথেঘাটে হিংসাত্মক সংঘর্ষের ঘটনাও বাড়তে থাকে।”

উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল শুটিংয়ের ঘটনা উল্লেখ করা যায়, যেখানে কিশোরদের হাতে অস্ত্র থাকার কারণেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও নিরাপদ নয়।

শেষ কথা
বেসামরিক আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকানা একটি জটিল বিষয়। এটি একদিকে আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে, আবার অন্যদিকে এটি ভুল ব্যবহারের ফলে ভয়াবহ সহিংসতাও ডেকে আনতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের নিজস্ব সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ করেছে। তবে, অস্ত্র সহজলভ্য হলে কি সত্যিই নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায়, নাকি এটি নতুন হুমকির সৃষ্টি করে—এই প্রশ্নের উত্তর আজও বিতর্কিত রয়ে গেছে।