সরবরাহ বাড়ায় রাজধানীর বাজারে কমেছে প্রায় সব ধরনের শাক-সবজি ও মাছের দাম। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম সামান্য বাড়লেও রোজার আগে আরও চড়েছে তেল ও চালের বাজার। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
রোজার বাকি এক মাসেরও কম সময়। রমজানের বাজার ধরতে এরইমধ্যে মজুত শুরু করছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়ছে তেল ও চালের বাজারে। ক্রেতারা বলছেন, রমজানের আগেই ফের অস্থির হয়ে পড়েছে তেলের বাজার। আর গত কয়েকমাস ধরে ভোগাচ্ছে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য চাল।
ক্রেতারা বলেন, রমজানে চালের চাহিদা কম থাকায় দাম সাধারণত বাড়ে না। তবে গত বছর রোজার আগে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিল ব্যবসায়ীরা। এবার সেই প্রবণতা শুরু হয়েছে দুই মাস আগে থেকেই।
ক্রেতারা আরও বলেন, রোজার আগেই তেল-চালের বাজারে যে অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, তাতে রোজায় কী হবে বলা মুশকিল। সরকারের উচিত এখনই ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরা। না হলে রোজায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য চলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে আরও চড়েছে চালের বাজার। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৮০-৮৪ টাকা, আটাইশ ৫৮-৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫২-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের বরিশাল রাইচ এজেন্সির বিক্রেতা আল হাসিব বলেন, চালের দাম কমার বদলে উল্টো বেড়ে যাচ্ছে। মিল পর্যায়ে তদারকি নেই। এখানে তদারকি না বাড়ালে সামনে দাম আরও বাড়বে।
তেলের বাজারের অবস্থা আরও করুণ। দাম বাড়ানোর এক মাস পরও বাজারে কৃত্রিম সংকট কাটেনি বোতলজাত সয়াবিন তেলের। ভোক্তাদের অভিযোগ, বোতলজাত পাঁচ লিটারের তেল কিছুটা পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে। হাতে গোনা দুয়েকটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
আর বোতলজাত সয়াবিন তেলের চেয়েও বেশি দামে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হতে দেখা গেছে। খোলা সয়াবিন তেল কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায়। তবুও মিলছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে।
তেলের বাজারের এই অস্থিরতার কথা স্বীকার করে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না কোম্পানিগুলো। দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। আবার তেল কিনতে গেলে সঙ্গে অন্য পণ্য কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে কিছুটা সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।
এদিকে, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়। তবে স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের দাম। প্রতি ডজন লাল ডিম ১৩০-১৩৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৩৫-২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
স্বস্তি ফিরেছে সবজির বাজারে। কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত কম মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা, মুলা ১৫-২০ টাকা ও লতি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০-৩৫ টাকা, গাজর ২৫-৩০ টাকা, টমেটো ৩০-৩৫ টাকা, শিম ২০ টাকা, শালগম ২০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়।
এছাড়া প্রতি কেজি ধনেপাতা ২০-৩০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ২০-২৫ টাকা, পাতাসহ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ২০-২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২৫-৩০ টাকা, ব্রকলি ৩০-৪০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা।
সবজির দামের নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে আলু ও পেঁয়াজের বাজারেও। বর্তমানে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। আর কেজিতে ৫ টাকা কমে খুচরায় প্রতি কেজি মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪৫-৫০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়।
স্থিতিশীল রয়েছে কাঁচা মরিচের দাম। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০-৫০ টাকায়, আর পাইকারিতে ৩০-৪০ টাকা। এছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পুঁইশাক ২০-২৫ টাকা, লাউশাক ৩০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা, মেথি শাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়।
অস্থির হয়ে ওঠা ইলিশের বাজারে স্থিতিশীলতা বিরাজ করলেও কমেছে অন্যান্য মাছের দাম। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২৮০০ টাকা, ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮০০-১৯০০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৩০০-১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারের ইলিশ বিক্রেতারা বলেন, সরবরাহ তেমন বাড়েনি। তবে দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা কমেছে। এতে কমেছে দামও।
বাজারে কেজিতে ২০-৫০ টাকা পর্যন্ত কমে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৭৫০ থেকে ৮০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান। আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।