ঢাকারবিবার , ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • অন্যান্য

শতবর্ষের গল্প: দীর্ঘ জীবনের রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ । ৯ জন

দূর পূর্বের এক ছোট্ট দ্বীপদেশ, যেখানে সূর্যোদয় হয় লাল আভায়, সেখানে এক বৃদ্ধা বসে আছেন বাগানের এক কোণে। তার গাল বেয়ে সময়ের রেখা নেমে গেছে, কিন্তু চোখে এখনো এক আশ্চর্য দীপ্তি। তার বয়স একশো পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই, কিন্তু সকালে এক কাপ গরম চা আর টাটকা মাছ খেয়ে দিন শুরু করার অভ্যাস বদলায়নি।

এ শুধু সেই বৃদ্ধার গল্প নয়, বরং এমন হাজারো মানুষের, যারা এক শতক পেরিয়ে এসেছেন জীবনের পথে। জাপানে এমন ৯৫ হাজারেরও বেশি শতবর্ষী মানুষ আছেন, যারা প্রমাণ করেন যে সুস্থ জীবনযাপন সত্যিই দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি।

তবে শুধু জাপান নয়, সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছেন শতবর্ষী মানুষেরা। যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩ হাজারের বেশি, চীনে ৫৪ হাজার, এমনকি ভারতে যেখানে জনসংখ্যা বিপুল, সেখানেও ২৭ হাজার মানুষ জীবনের শতবর্ষ উদযাপন করছেন।

সময়ের এই যাত্রায় কে কেমন বেঁচে থাকেন, তা নির্ভর করে শুধু বয়সের ওপর নয়, বরং জীবনধারার ওপরও। বয়স যে কেবল সংখ্যা, তা যেন প্রমাণ করেন এসব শতবর্ষীরা—তাদের গল্পগুলো সময়ের সীমানা পেরিয়ে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকে।

এই দীর্ঘ জীবনের রহস্য কী? সুস্থতা, খাদ্যাভ্যাস, নাকি মন ভালো রাখার জাদু?

জাপানের ওকিনাওয়ার সেই বৃদ্ধা যখন সকালে তার চায়ের কাপে চুমুক দেন, তখন চারপাশে ছোট নাতি-নাতনিদের কোলাহল বয়ে যায়। তিনি মৃদু হাসেন। এত বছর ধরে টিকে থাকার রহস্য কী? হয়তো তা লুকিয়ে আছে তার সহজ-সরল জীবনযাপনে—সতেজ সবজি, টাটকা মাছ, ধীরস্থির জীবনযাত্রা আর হৃদয়ের প্রশান্তিতে।

কিন্তু শুধু জাপান নয়, পৃথিবীর নানা প্রান্তেই শতবর্ষীরা তাদের নিজস্ব পথে দীর্ঘ জীবন কাটাচ্ছেন। ফ্রান্সের কোনো বৃদ্ধা হয়তো প্রতিদিন এক গ্লাস রেড ওয়াইন পান করেন, আর ইতালির কোনো পাহাড়ি গ্রামে কেউ হয়তো অলিভ অয়েল আর গার্লিকের জাদুতে শতাব্দী পেরিয়ে এসেছেন। ভারতের কোনো শতবর্ষী হয়তো যোগব্যায়াম ও নিরামিষ খাদ্যাভ্যাসের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি।

আসলে, সুস্থ-সবলভাবে শত বছর বেঁচে থাকার কোনো নির্দিষ্ট সূত্র নেই। তবে গবেষকরা বলেন, খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত চলাফেরা, মানসিক শান্তি এবং সামাজিক সংযোগ—এসবই দীর্ঘায়ুর প্রধান ভিত্তি। কিন্তু সত্যিকারের রহস্য হয়তো আরও গভীরে। হয়তো শতবর্ষীরা এমন এক জীবন যাপন করেন, যেখানে প্রতিটি দিনই একটি উপহার। যেখানে অল্পতেই সুখ খুঁজে নেওয়া যায়, যেখানে হাসির পরশ, ভালোবাসার ছোঁয়া, আর জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকেই বড় করে দেখা হয়।

সত্যিই, শতবর্ষীদের জীবন আমাদের শেখায় যে সময়ের গতি রোধ করা যায় না, তবে তাকে সঙ্গী করে হাঁটা যায়। জীবন শুধুই দীর্ঘ হওয়ার জন্য নয়, বরং অর্থবহ হওয়ার জন্য। আর হয়তো এটাই দীর্ঘজীবনের আসল রহস্য।