ঢাকামঙ্গলবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উন্নয়ন সমন্বয়ের সেমিনারে অর্থনীতিবিদদের অভিমত

আসন্ন অর্থবছরে এক শলাকা সিগারেটের দাম অন্তত ৯ টাকা করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২৫ ৪:৩৬ অপরাহ্ণ । ৫২ জন

সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে সিগারেটের দাম অল্প করে বাড়ানো হলেও অন্য নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধির তুলনায় তা নগণ্য। তাই সিগারেটের সহজলভ্যতা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে সিগারেটের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে। তবে এই দামবৃদ্ধির পরও সবচেয়ে সস্তা সিগারেটের একটি শলাকা ৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিগারেটের সহজলভ্যতা কমাতে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এক শলাকা সিগারেটের দাম অন্তত ৯ টাকা ধার্য করতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা।

আজ (মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) ঢাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনে ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এমন মত প্রকাশ করেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে এই সেমিনারে সম্মানিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিপিডি-এর গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন- “সিগারেট-সহ অন্যান্য তামাকপণ্যে কার্যকর করারোপ করতে না পারায় সাম্প্রতিক অর্থবছরগুলোতে একদিকে সরকার বিপুল রাজস্ব আহরণের সুযোগ হারিয়েছে, অন্য দিকে নিম্ন আয়শ্রেণীর নাগরিক এবং কিশোর-তরুণদের কাছে সিগারেটের সহজলভ্যতাও কমানো সম্ভব হয়নি”।

সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপনায় উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন যে, চলতি অর্থবছরের অর্ধেক অতিক্রান্ত হওয়ার পর সিগারেটের দাম গড়ে ১৭.৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অর্থবছরের শুরুতেই সিগারেটের দাম এই মাত্রায় বাড়ালে আরও বেশি সুফল পাওয়া যেত বলে দাবি করেন তিনি। বর্তমানে বাজারে নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ, ও অতি উচ্চ- এই চার স্তরের সিগারেট বিক্রি হচ্ছে।

আসন্ন অর্থবছরে নিম্ন ও মধ্যম- এই দুটি স্তরকে একিভূত করে একটি নতুন স্তর তৈরি করে মোট স্তরের সংখ্যা তিনটিতে নামিয়ে আনলে কর আহরণের দক্ষতা বাড়বে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল। এই নতুন তিন স্তরের সিগারেটের দশ-শলাকার একেকটির দাম যথাক্রমে ৯০ টাকা, ১৪০ টাকা, ও ১৯০ টাকা ধার্য করার প্রস্তাব করেছে দেশের তামাক-বিরোধী নাগরিক সংগঠনগুলো। এই প্রস্তাবনা আগামী বাজেটে প্রতিফলিত করা গেলে ২৪ লক্ষের বেশি নাগরিককে ধূমপান ত্যাগ করানো যাবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ১৭ লক্ষের বেশি অকালমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের সহযোগি অধ্যাপক ড. সুজানা করিম বলেন যে, নাগরিক সংগঠনগুলোর প্রস্তাবনা অনুসারে সিগারেটের দাম বাড়ানো গেলে সিগারেটের ওপর বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক হার (৬৭ শতাংশ) অপরিবর্তিত রেখেই আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব। আর সম্পূরক শুল্ক হার বাড়িয়ে ৭০ শতাংশ করলে বাড়তি রাজস্বের অনুপাত ৪৫ শতাংশ করা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন যে, সিগারেটের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার। তামাকপণ্য বিক্রি থেকে যে রাজস্ব আসে, তা তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ৭৫ শতাংশ বলে জানান তিনি।

সেমিনারে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধি, অর্থনীতিবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা। সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের হেড অফ প্রোগ্রামস শাহীন উল আলম।