ঢাকাশনিবার , ১ মার্চ ২০২৫

ঢাকা শহরের স্বাস্থ্যসেবা: চ্যালেঞ্জ এবং বর্তমান পরিস্থিতি

রঞ্জন কুমার দে
মার্চ ১, ২০২৫ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ । ৭০ জন

ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী, বিশাল জনসংখ্যা এবং আধুনিক অবকাঠামো থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবা খাতে কিছু সমস্যার মুখোমুখি। ঢাকা শহরের স্বাস্থ্যব্যবস্থার প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো—চিকিৎসকের অভাব, হাসপাতালের অবকাঠামোগত সমস্যা, সেবা প্রদান ব্যবস্থার ধীরগতি, এবং গুণগত মানের বৈষম্য। যদিও কিছু উন্নত হাসপাতাল এবং ক্লিনিক আছে, তবে শহরের অধিকাংশ মানুষের জন্য প্রাপ্ত সেবা একযোগে সাশ্রয়ী বা উচ্চমানের নয়।

ঢাকায় আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা ও উন্নত হাসপাতাল থাকলেও, কিছু সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে। এগুলো হচ্ছে:

চিকিৎসকের অভাব: ঢাকার চিকিৎসক এবং নার্সদের সংখ্যা অনেক কম। ফলে, রোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয় এবং সঠিক সময়ে সেবা না পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ভীড় এবং সেবার গুণগত মান: ঢাকার প্রধান সরকারি হাসপাতালগুলোর অধিকাংশে ভীড় খুব বেশি, যা চিকিৎসাসেবার গুণগত মানে প্রভাব ফেলতে পারে।

অবকাঠামোগত সমস্যা: অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল এবং কিছু বেসরকারি হাসপাতালেও স্বাস্থ্য সেবার গুণগত মানের উন্নতির জন্য অবকাঠামো এবং যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে।

সেবা ব্যবস্থার ধীরগতি: সেবার প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতি, রোগীকে বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করতে হয় এবং দীর্ঘসূত্রিতা ঘটতে থাকে।

ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নতির জন্য পদক্ষেপ

ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নতি করতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে কিছু পরামর্শ হলো:

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি: ঢাকায় চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরি। সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

নতুন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন: ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা যেতে পারে। এতে সেবার চাপ কমবে এবং গ্রাম থেকে শহরে আসা রোগীরা দ্রুত সেবা পাবেন।

স্বাস্থ্য অবকাঠামো আধুনিকীকরণ: ঢাকার প্রধান হাসপাতালগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত করতে হবে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান জরুরি।

স্বাস্থ্যসেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার: টেলিমেডিসিন সেবা চালু এবং স্বাস্থ্য তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। এর মাধ্যমে রোগীকে দ্রুত সেবা দেওয়া যাবে এবং শহরের বাইরের মানুষও সুবিধা পাবেন।

সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ: ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব বাড়ানো যেতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে অধিকতর বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে সংস্কার এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেবার মান বাড়ানো যেতে পারে।

স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো: সরকারের পাশাপাশি, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। ঢাকার স্বাস্থ্য সেবা খাতে একযোগে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে, যার মাধ্যমে দ্রুত পরিবর্তন আনা সম্ভব।

ঢাকা শহরের স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নতির অনেক সুযোগ রয়েছে। সঠিক পরিকল্পনা এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। উন্নত স্বাস্থ্য অবকাঠামো, চিকিৎসক প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দ্বারা ঢাকার স্বাস্থ্যসেবা খাত শীঘ্রই উন্নতি লাভ করতে পারে। তবে, একটি সুস্থ সমাজ গড়তে ঢাকার স্বাস্থ্যব্যবস্থার আরও কার্যকর উদ্যোগ এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন।