বাংলাদেশে ১৫-বছর ও তদুর্ধদের মধ্যে ধূমপানের চাইতে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার বেশি। গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) নামক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৩৫.৩% প্রাপ্তবয়সী যে কোনো ধরণের তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহা করে। তন্মধ্যে ১৮% মানুষ ধূমপান করে এবং ২০.৬% মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার করে। অর্থাৎ দেশে ধূমপায়ীর চাইতে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে জর্দা, সাদাপাতা ও গুল অন্যতম। তন্মধ্যে পানের সঙ্গে সাদাপাতা ও জর্দার ব্যবহার খুবই পুরোনো। এছাড়া তামাক পাতা পাউডার (গুল) মাড়িতে ব্যবহারের প্রচলনও লক্ষ্যনীয়।
ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে মুখ ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি ও অকালমৃত্যু বাড়ছে। জনসাধারণকে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এর উদ্যোগে ‘ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতি’ শীর্ষক দু’মাসব্যাপী প্রচারণা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ -এর মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে [ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এক্স, লিংকইন, ইউটিউব] ভুক্তভোগীদের বক্তব্যসহ বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে এবং বিভিন্ন কন্টটেন্ট নির্মাণ ও পোস্ট করা হবে।
এ প্রচারণা ভিডিও বাংলাদেশ সরকারের ক্যান্সার হাসপাতালে ধারণ করা হয়েছে। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের কারণে মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন সত্যিকারের রোগী ’নুরুন্নাহার (৫৫)’ এর মুখে তার প্রাণঘাতী রোগ সম্পর্কে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি নিজের মুখে জানান যে, ‘আমি ২০ বছর আগে সাদাপাতা খাওয়া শুরু করি, আস্তে আস্তে সাদাপাতা খাওয়া আমার নেশা হয়ে যায়। আমি এখন খাবার খাইতে পারি না, পানি খাইতেও কষ্ট হয়।’ এরপর একজন সত্যিকারের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পোশাকে জানান, ‘আমাদের দেশে তামাকের এক ভয়াবহ নেশা হলো জর্দা, গুল ও সাদাপাতার ব্যবহার’।
গোলাম মোস্তাফা নামের আরেক রোগীকে দেখিয়ে তিনি জানান, ‘তার শ্বাসনালীর ক্যান্সার। ওনার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তাই গলা ফুটো করে আমরা আলাদা টিউব বসিয়ে দিয়েছি।’ অবশেষে, একটি ভয়েসওভার জানায় যে, জর্দা, গুল, সাদাপাতাও ধূমপানের মতোই বিপদজনক! সকল তামাক ব্যবহারকারীকে তামাক ছাড়ার আহবান জানিয়ে বিজ্ঞাপনটি শেষ হয়। এ সচেতনতামূলক প্রচারণায় ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে ভূক্তভোগীদের জোরালো বক্তব্য তুলে ধরে।
ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর সিনিয়র কনসালটেন্ট মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে মানুষ কম জানে, যে কারণে গ্রামীণ সমাজে, নিরক্ষর ও স্বল্প শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং দরিদ্রদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার বেশি। তাছাড়া, অনেকে ধোঁয়াবিহীন তামাককে কম ক্ষতিকর মনে করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের মতোই ধোঁয়াবিহীন তামাকও আসক্তিকর এবং প্রাণঘাতী। তাই ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মোড়কের ৯০% স্থানজুড়ে দেয়া প্রয়োজন।
ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর টেকনিক্যাল এডভাইজার আমিনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার অনেক বেশি। যে কারণে বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে মুখগহ্বরের ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে খুচরা বিক্রি বন্ধ, যত্রতত্র বিক্রি বন্ধ ও এ লক্ষ্যে বিক্রয় কেন্দ্রকে লাইসেন্স আওতায় এনে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।