ঢাকাসোমবার , ৯ অক্টোবর ২০২৩

দেশে বাত রোগে কর্মক্ষমতা হারায় ৫.৫ শতাংশ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ৯, ২০২৩ ১০:১৩ পূর্বাহ্ণ । ২৪৭ জন

দেশে প্রতি তিনজনে একজন যে কোনো বাত বা আর্থ্রাইটিস রোগে ভোগেন। অস্থিসন্ধি বা হাড়ের গিরায় ব্যথা, গায়ে ব্যথা, মাংসে ব্যথা ইত্যাদি আর্থ্রাইটিসের প্রধান লক্ষণ হলেও এই রোগ শরীরের প্রায় সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দেশে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ বাতজনিত রোগের কারণে কর্মক্ষমতা হারান।

গতকাল রোববার (৮ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ‘জয়েন্ট পেইন’ নিয়ে মাসিক সেন্ট্রাল সেমিনারে এ তথ্য দেন বিশেষজ্ঞরা। সেমিনারের আয়োজন করে বিএসএমএমইউ সেন্ট্রাল সেমিনার সাব কমিটি।

সেমিনারে জয়েন্ট পেইনবিষয়ক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। এরমধ্যে ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহেবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ ‘ফিজিয়াট্রিক ম্যানেজমেন্ট অব জয়েন্ট পেইন’, শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিশু রিউমাটোলজি ডিভিশনের হেড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার ‘অ্যাপ্রোচ টু দ্য পেডিয়াট্রিক পেশেন্টস প্রেজেন্টিং উইথ জয়েন্ট পেইন’, রিউমাটোলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) সৈয়দ জামিল আব্দাল ‘অ্যাপ্রোচ টু দ্যা এডাল্ট পেশেন্টস প্রেজেন্টিং উইথ জয়েন্ট পেইন’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেমিনারে বলা হয়, পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি বাত রোগে ভোগেন। শহরের চেয়ে গ্রামের লোকজনের মধ্যে এই রোগের প্রভাব বেশি। তবে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা নিলে কার্যক্ষমতা হারানো থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

বাংলাদেশে বাতজনিত রোগের চিকিৎসক বা রিউমাটোলোজিস্টদের সংখ্যা খুবই কম বলে জানানো হয় সেমিনারে। এজন্য দেশের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে রিউমাটোলোজি বিভাগ খোলা উচিত বলে বক্তারা জানান।

বক্তারা বলেন, দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে রিউমাটোলোজিতে এমডি কোর্স করার সুযোগ নেই। তাই সরকারি বড় বড় হাসপাতালে এ কোর্স চালু করা প্রয়োজন। তবে আশার কথা হলো, বর্তমানে কিছু কিছু সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে রিউমাটোলোজি বিভাগের সেবা দেওয়া হচ্ছে।

সেমিনারে জানানো হয়, ১০-২০ শতাংশ শিশু বিভিন্ন ধরনের মাংসপেশি, হাড় ও অস্থিসন্ধির রোগে আক্রান্ত। শিশুদের সমস্যা বর্তমানে ক্রমবর্ধমান। অস্থিসন্ধির প্রদাহ বলতে বোঝায় ফুলে যাওয়া, তরল পদার্থ নিঃসরণজনিত অবস্থা। এর লক্ষণগুলোর মধ্য রয়েছে অস্থিসন্ধি নাড়াতে না পারা, নাড়ানোর সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া, অস্থিসন্ধি গরম হয়ে যাওয়া। এ রোগ হলে রোগীদের ব্যবস্থাপনায় বয়স, লিঙ্গ, রোগভোগের কাল, ব্যথার ধরণ, গিরা জমে যাওয়া, অন্যান্য প্রয়োজনীয় ইতিহাস গ্রহণ করার প্রয়োজন।

পাশাপাশি রোগটি প্রদাহজনিত কি না তা সুস্পষ্টরূপে নির্ধারণ করা, সম-অসম প্রদাহ কি না, অস্থিসন্ধির বিকৃতি, অস্থিসন্ধি ছাড়া অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা ও আক্রান্ত অস্থিসন্ধির সংখ্যা অনুযায়ী রোগ নির্ণয় করা হয়ে থাকে। এ রোগ হলে অস্থিসন্ধি প্রদাহের ৮০ শতাংশ নির্ণয় হয় রোগের ইতিহাস থেকে, আর ১৫ শতাংশ শারীরিক লক্ষণ ও মাত্র ৫ শতাংশ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় হয়। একক কোনো পরীক্ষা এ ধরনের রোগ নিশ্চিত করতে পারে না।

সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, জয়েন্ট পেইন একটি কমন রোগ। এ রোগ কোনো মানুষের নেই তা খুঁজে বের করা কষ্টকর। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে মানুষ কর্মক্ষমতা পর্যন্ত হারাতে পারে। তাই দ্রুত রোগ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল সাব কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফাতিমা জহুরা। সেমিনারে বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, কনসালট্যান্ট, চিকিৎসক ও রেসিডেন্টরা উপস্থিত ছিলেন।